প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ১২:৪৩ এএম
৫১ বছর ধরে প্রেমিকার ছবি বুকপকেটে নিয়ে বেঁচে আছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নাম তানেসউদ্দিন। প্রেমিকার নাম জোহরা। বিয়ে কেন করেননি? এমন প্রশ্নে তানেসউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমি এখনও স্বপ্নে জোহরাকে দেখি। জোহরার মতো সুন্দর কখনোই কাউকে লাগেনি।’
তানেসউদ্দিন আর জোহরার
প্রেমের শুরু ১৯৬৪ সালে। তানেসউদ্দিন তখন ক্লাস টেনে পড়েন। আর জোহরা ক্লাস এইটে।
কিশোর মনের চঞ্চলতা, ভীরুতা নিয়েই
হয়েছিল প্রেমের শুরু।
জোহরার সঙ্গে দেখা করার
জন্য প্রায়ই সন্ধ্যায় তানেসউদ্দিনকে মেঘনা নদী পার হতে হতো নৌকায় করে। দেখা করে
আবার নৌকায়ই ফিরতেন তিনি। একদিন তাঁদের সন্ধ্যায় দেখা হওয়ার কথা। আগে থেকেই
জোহরাকে খবর দেওয়া হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর ওপারে জোহরা অপেক্ষা করছিলেন।
এদিকে পারাপারের জন্য নেই কোনো নৌকা। কীভাবে ওপারে যাবেন তানেসউদ্দিন?
উপায় না পেয়ে সাঁতরে
মেঘনা পার হয়েছিলেন তিনি। ওপারে উঠে জোহরার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেই রাতে উত্তাল
জোয়ারের মধ্যে সাচ্চা প্রেমিকের মতো ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। এমন পাগলামীর জন্য
জোহরার বকাও খেয়েছিলেন। তাতে কী? সম্পর্কের গভীরতাটুকু তো বোঝাতে পেরেছিলেন।
একসময় ঘনিয়ে এল
মুক্তিযুদ্ধের বছর। সাল ১৯৭১। চারদিকে যুদ্ধের ডাক। সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার
সিদ্ধান্ত নিলেন তানেসউদ্দিন। এ কথা শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন জোহরা। প্রথমে
আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু পরে
সম্মতি দিয়েছিলেন ঠিকই।
তানেসউদ্দিন জোহরাকে
বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন করে
তবেই তোমাকে বিয়ে করব। তুমি অপেক্ষা কইরো।’
বিদায় দেওয়ার সময়
তানেসউদ্দিনকে খামে মোড়ানো একটি চিঠি দিয়েছিলেন জোহরা। খামের ভেতর ১০০ টাকার একটি
নোট ছিল। আর চিঠিতে লেখা ছিল, ‘শুধু টাকাই রাইখো না, সঙ্গে আমার ভালোবাসাও রাইখো।’
কলকাতা, আগরতলায় যুদ্ধ
প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরেন তানেসউদ্দিন। লোকেশন রেকি করেন। মিটিং করেন।
শত্রুপক্ষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের দিন কাটতে থাকে তাঁর। জোহরা
কেমন আছে? কী করছে? এসব ভেবে
মাঝেমধ্যে আনমনা হয়ে পড়েন। স্টেনগান মাথায় ঠেকিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবতেন
তানেসউদ্দিন।
দীর্ঘ নয়মাস পর যুদ্ধ শেষ
হয়। যুদ্ধ শেষে তানেসউদ্দিন সর্বপ্রথম জোহরাদের বাড়িতে ছুটে যান। গিয়ে জানতে পারেন, জোহরা ও তার
বাবাকে পাকিস্তানি মিলিটারিরা হত্যা করেছেন।
রণক্ষেত্রে বসেও যে মন
পড়ে থাকতো মেঘনা নদীর কাছে,
যেখানে উত্তাল
স্রোত ঠেলে যেতে হয়। যেখানে চাঁদের আলোর নিচে জোহরার আঁচল বিছানো। সেই জোহরার
স্থান হলো বুক পকেটে। ৫১ টা বছর মেয়েটি সেখানে আছে। সেখানেই থাকবে!
থাকুক।
জেডআই/