• ঢাকা শুক্রবার
    ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে টাকা ছাড়া মেলে না সরকারি ওষুধ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২, ১১:৪৭ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ে টাকা ছাড়া মেলে না  সরকারি ওষুধ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে সরকারি ওষুধ কিনে ব্যবহার করছে সেবা প্রত্যাশী রোগীরা। কখনও বাহিরের দোকান থেকে, কখনও বা হাসপাতালের ভিতরেই চলছে রমরমা বেচাঁকেনা।

জনসাধারণের সুবিধার্থে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চাহিদার প্রায় ৭২ শতাংশ ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করে সরকার। কিন্তু জেলার এই সরকারি হাসপাতালে প্রায় শতভাগ ওষুধই কিনে নিতে হয় রোগীদের। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের হলেও, চলতি মাসের ৬ তারিখে সরকারি ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরে এক যুবক। এর পর থেকেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় জেলাজুড়ে।

পরবর্তীতে চলতি মাসের ২৪ তারিখে জামিনে মুক্তি পান সরকারি ওষুধ বিক্রির দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ বছর বয়সি ওসমান গণি। তিনি হাসপাতালে মেডিকেল এ্যাসিষ্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স (ম্যাটস) করছিলেন। পরে ওসমান গণির কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় হাসপাতালে সরকারি ওষুধ ব্যবসার ভায়াবহ অবস্থার সত্যতা।

বুধবার (৩০ নভেম্বর) ওসমান জানান, হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালাল চক্রের ঐক্যবদ্ধ সেন্ডিকেট চালিয়ে যাচ্ছে এই সরকারি ওষুধের ব্যবসা।

 ঠাকুরগাঁও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারি-কর্মকর্তার নেতৃত্বে চলছে সরকারি ওষুধ বিক্রির এই অবৈধ ব্যবসা। ম্যাটসের বিভিন্ন ছাত্র, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও দালাল চক্রের সহায়তায় হাসপাতালেই বিক্রি হয় সরকারি ওষুধ। 

এছাড়াও হাসপাতাল কর্মকর্তাদের সহায়তায় বড় একটি অংশ বিক্রি করা হয় হাসপাতালের বাহিরের দোকানে।

ওসমান গণি বলেন, সরকারি ওষুধ বিক্রির ঘটনায় আমরা একেবারে শেষ স্তরে কাজ করি। আমার সাথে ম্যাটসের আরও কিছু ছাত্র, নার্স ও ওয়ার্ডবয় এই কাজগুলো করি। হাসপাতালের অভ্যন্তরে ওষুধের ক্রেতার খোঁজ করা, ওষুধ কিনতে রাজি করানো ও দামাদামি শেষে ওষুধ বিক্রি করাই আমাদের কাজ। গ্রাম থেকে আসা গরীব ও অশিক্ষিত রোগীরাই আমাদের পছন্দের টার্গেট থাকে। হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছ থেকে আমরা ওষুধগুলো সংগ্রহ করি। এতেকরে দিন শেষে বেশ মোটা অংকের ভাগ পাই। তবে আমাদের সম্পুর্ণ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করে হাসপাতাল সিন্ডিকেটের কয়েকজন।

এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সুশাসনের জন্যে নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি মনতোষ কুমার দে জানান, আমরা দেখছি সরকারি হাসপাতালে রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারি ওষুধ বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। পাওয়া যাচ্ছে হাসপাতালগুলোর সামনের ফার্মেসী ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে।

 ওষুধের গায়ে সরকারি সম্পদ বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ লেখা থাকলেও থেমে নেই সরকারি ওষুধ বিক্রি। 

এতে  দেশের বেশিরভাগ দরিদ্র জনগণ যেমন সরকারি ওষুধ পাচ্ছে না, তেমনি স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সরকারি হাসপাতালের তত্বাবোধায়ক ডাঃ ফিরোজ জামান জুয়েল জানান, চলতি মাসে সরকারি ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে একজন ধরা পড়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি এবং এই চক্রের সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

 

সাজেদ/

আর্কাইভ