• ঢাকা শনিবার
    ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ০৮:৫০ এএম

আজ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা

আব্দুল বারী, ঢাকা

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা তথা আশ্বিনী পূর্ণিমা আজ রবিবার।

তিন মাসব্যাপী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত, ধ্যান সমাধী অধিষ্ঠান ও গৃহ সংঘের উপসত শীলব্রত পালনের সমাপ্তির দিন এই প্রবারনা পূর্ণিমা উৎসব। প্রবারনা পূর্ণিমার পর দিন থেকে যেই বিহারে ভিক্ষু সংঘ বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান করেছেন সেই বিহারে দানোত্তম শুভ কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হবে।

ভিক্ষু সংঘরা সেখানে উপস্থিত হয়ে গৃহীদের উদ্দেশ্য ধর্মালোচনা করবেন বহুজনের হিত ও সুখের জন্য।  বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা মহাকারুনিক গৌতম বুদ্ধের সময়ে বর্ষা মৌসুমে ভিক্ষু সংঘের পিন্ড চরন ছিল কষ্টসাধ্য। তাই তিনি বর্ষাকালীন ভিক্ষু সংঘকে বিহার তথা বৌদ্ধ মন্দিরে থেকে ধ্যান সাধনা ও জ্ঞান চর্চা করার নিদের্শনা দিয়ে ছিলেন। আর সেই সময় আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত গৌতম বুদ্ধের সেই নিদের্শনা পালন করে আসছেন ভিক্ষু ও গৃহীসংঘ। এই প্রবারনা পূর্ণিমাকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ফানুস উড়ানো উৎসব ও বলে থাকে।

এই উৎসবটি আশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়।

প্রবারণা শব্দের উৎপত্তিঃ

‘প্রবারণা’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া। ‘প্রবারণা’ শব্দটির পালি ভাষারূপ ‘পবারণা’। এর অর্থ হলো ‘নিষেধ করা’, ‘শিক্ষা সমাপ্তি’, ‘অভিলাষ পূরণ’, ‘আশার তৃপ্তি’, ‘প্রকৃষ্টরূপে বরণ করা’, ‘দোষত্রুটি স্বীকার’ ইত্যাদি।

এই উৎসবে ভিক্ষুগণ তাদের দোষত্রুটি অপর ভিক্ষুদের নিকট প্রকাশ করে প্রায়শ্চিত্ত বিধান করার আহবান জানায়। জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে কোনো অপরাধ করে থাকলে তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করাই হলো প্রবারণার মূল উদ্দেশ্য।

মহামতি গৌতম বুদ্ধ জাগতিক দুঃখ থেকে মুক্তির জন্য তার রাজত্ব ভোগ-বিলাস ধনসম্পদ ত্যাগ করে আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সংসার ত্যাগী হয়েছিলেন। তিনি সারথি ছন্দককে সঙ্গে নিয়ে অশ্ব কন্থকের পিঠে চড়ে অনোমা নদীর তীরে যান। সেখানে রাজ ক্ষমতা ছন্দককে বুঝিয়ে দিয়ে সন্ন্যাস-ব্রত গ্রহণ করেছিলেন।

এরপর তিনি তলোয়ার দিয়ে নিজের চুলের গোছা কেটে নিয়ে আকাশে নিক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, তার মধ্যে যদি বুদ্ধ হওয়ার মতো গুণ থাকে তাহলে উপরে ছুড়ে দেওয়া চুলের গোছা মাটিতে না পড়ে আকাশে স্থিত হয়ে  থাকুক। বড়ই আশ্চর্যের বিষয় তার নিক্ষিপ্ত একটি চুলও মাটিতে পড়ল না।

বৌদ্ধধর্ম মতে স্বর্গের রাজা ইন্দ্র সেই চুলগুলো হীরা মণি মানিক্যখচিত স্বর্ণপাত্রে ধারণ করে তাবতিংস স্বর্গে কেশ-ধাতু স্থাপন করে একটি চৈত্য নির্মাণ করেন। সেই চৈত্যের নাম রাখা হয় ‘চুলামনি চৈত্য’ স্বর্গের দেবতারা এখনও এর পূজা করে থাকেন।

এই পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর ভারতের সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন। মানব জাতির সুখ শান্তি ও কল্যাণে দিকে দিকে স্বধর্ম প্রচারের জন্য তার ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে, এদিনেই তার তিন মাসের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ এই তিথিতে ৬০ জন প্রশিক্ষিত শিষ্যকে ধর্ম প্রাচারের জন্য বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। তিনি তাদের বলেছিলেন ‘‘চরত্থ ভিকখবে চারিকং, বহুজন হিথায় বহুজন সুখায়’’ - অর্থাৎ, তোমরা বহুলোকের সুখের জন্য চারিদিক ছড়িয়ে পড়।

বুদ্ধভক্ত পূজারীরা স্বর্গে আরোহণ করতে পারেন না। তাই তারা কাগুজে ফানুস তৈরি করে বিশেষ একটি দিনে ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশ্যে আকাশ-প্রদীপ হিসেবে ফানুস বাতি উত্তোলন করে থাকেন।

ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করে উৎসর্গ লক্ষ্যে খালি পায়ে ফানুস উড়িয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সাধু-ধ্বনির সুরে সুরে ফানুস উড়ানো হয়। আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৃষ্টি ও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় অনেক সময় ফানুস ওড়ানোর পরিবেশ এবং সুযোগ কোনোটিই থাকে না। তাই প্রবারণা পূর্ণিমা বা আশ্বিনী পূর্ণিমার দিনে ফানুস ওড়ানো হয়।

 

এসএএস

আর্কাইভ