• ঢাকা শনিবার
    ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধরলা নদীতে ভারতীয় রমণীদের সূর্য পূঁজো

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০৩:০০ পিএম

ধরলা নদীতে ভারতীয় রমণীদের সূর্য পূঁজো

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

রোববার মধ্য রাত থেকে লগ্ন শুরু হয়েছে। আজ সোমবার ভোর হতে সূর্য পূঁজো শুরু হয়েছে। রমণীকূল নদীর স্রোতধারায় বুক পানিতে নেমে উদীয়মান সূর্যকে পূঁজো করেছেন। নানা রংঙ্গের কুলা, ডালা, চাইলন ফল ফলাদি দিয়ে সাজিয়ে সূর্যকে ভোগ দিয়েছেন। উলুধ্বনি, শাঁখ, ঢাক ঢোল বাজিয়ে পুরোহীত গণ মন্ত্র ও শ্লোক জপে পূঁজো করিয়েছেন।  

এটা দু’দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি বড় উদাহরণ। চেংড়াবান্ধায় বাংলাদেশের ধরলা নদীর জলে ভারতীয়রা এই ছট (সূর্য) পূঁজোর আয়োজন করেছেন। নির্বিঘ্নে পূঁজা পালনে বিজিবি-বিএসএফ পাহারায় রয়েছে। পতাকা বৈঠকে সমাঝতা হয়েছে। শতবছর ধরে একই নিয়মে চলে আসছে এই পূঁজো করার দৃশ্য। এটি সীমান্ত গ্রামের মানুষের কাছে ছট পূঁজো বা সূর্য পূঁজো নামে পরিচিত।

জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তের চেংড়াবান্ধায় ধরলা নদীর পাড়ে বুক পানিতে নেমে সেমাবার ভোরে ছট পূঁজো বা সূর্য পূঁজোর আয়োজন করেছে ভারত। ধরলা নদী এখানে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর এপারে বাংলাদেশ ওপারে ভারত। নদীটির ওপার কোথাও ভারতে আবার কোথাও বাংলাদেশের সীমান্তে এঁকে বেঁকে গেছে। ছট পূঁজো যেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের চেংড়াবান্ধা মাষ্টার পাড়া গ্রাম। ভারতের চেংড়াবান্ধা গ্রাম।

শতশত বছর ধরে এখানে ছটপূঁজো হয়ে আসেছে। বুড়িমারী ও চেংড়াবান্ধা বৃটিশ আমল হতেই ব্যবসা বাণিজ্যে সমৃদ্ধ ছিল। এই পথ দিয়ে রেলপথে বৃটিশরা সৈন্যদের রসদ পাঠাত। গুরুত্বের কারণে চেংড়াবান্ধা ধরলা নদী বন্দরও এক সময় জনপ্রিয় ছিল। এই চেংড়াবান্ধা নদী ও রেলওয়ে যোগাযোগের কারণে বৃটিশরা বিহার হতে পশ্চিমা নিম্নবর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে এসে বসতি গড়ে তোলে। তারা মূলত সূত্রধর, রবিদাস, হরিজন, প্রভূদাসী সম্প্রদায়ের ছিল। এখনো এখানে একটি যৌন পল্লী রয়েছে। যাকে হিন্দু ধর্মে প্রভূতি দাসী বলে।

এই সম্প্রদাসের মানুষের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ছটপূঁজো বা সূর্য পূঁজো। এরা নিজেদের সূর্যের সন্তান মনে করে। তাই তারা প্রতিবছর সূর্য পূঁজো করে থাকে। সূর্য তাদের দেবতা। সূর্য তাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এনে দেবে।

ভোরের আলো ফুটিয়ে উঠতে না উঠতে মিলন মেলায় পরিণত হয় এই নদীর পাড়। বাংলাদেশের চেংড়াবান্ধার মাষ্টার পাড়া ও ভারতের চেংড়াবান্ধার মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়েছে। দু‘দেশের প্রতিবেশী গ্রামটিতে ভৌগলিক কারণে হিন্দু সম্প্রদায় লোক বেশি।

বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টরের ডিআইজি ব্রিগেডিয়ার বিজয় মেহতার নির্দেশে নিরাপত্তা বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শনিবার ছটপূঁজো ঘাট পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিএসএফ কর্তারা। ডিআইজি জানিয়েছেন, ছটপূঁজোয় চেংড়াবান্ধা সীমান্তে বিএসএফের বিশেষ নজরদারি রয়েছে।

নদীর ঘাট ঘুরে গেছেন মেখলিগঞ্জ পুলিশের এসডিপিও অরিজিৎ পাল চৌধুরী, সিআই পূরণ রাই, ওসি রাহুল তালুকদার, বিডিও অরুণ কুমার সামন্ত। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা তার উপর নেই কোনো কাঁটাতারের বেড়া।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনীর ৬১ তিস্তা বিজিবির বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার খায়রুল ইসলাম জানান, ছটপূঁজো বা সূর্যপূঁজোর বিষয়টি দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী জানে। সমঝোতার ভিত্তিতে এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের মাস্টার পাড়া ও ভারতের চেংড়াবান্ধা ঘেঁষা সীমান্তে পূঁজোর স্থান ভারতেই পড়েছে। কিন্তু নদীর পানি বাংলাদেশ হতে গড়িয়ে সেখানে যাচ্ছে। বিজিবির টহল পার্টি জোরদার করা হয়েছে।

এসএএস/এএল

 

আর্কাইভ