• ঢাকা বুধবার
    ১৫ মে, ২০২৪, ৩১ চৈত্র ১৪৩১

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রেমিট্যান্সে টান, রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৩, ০৩:৫৭ পিএম

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে রেমিট্যান্সে টান, রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কা

এক কোটির বেশি প্রবাসীর কাছ থেকে মাসে খুব সহজে ৩০০ কোটি ডলার দেশের রিজার্ভে যোগ করা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। প্রতীকী ছবি

সিটি নিউজ ডেস্ক

 

জোর করে ডলারের দাম কমিয়ে রাখার কারণেই কমছে প্রবাসী আয়। এমনকি পরীক্ষিত পথ ছেড়ে এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকলে সংকটে পড়তে পারে দেশের রিজার্ভ। নানা হিসাব মিলিয়ে এমন আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে ডলারের দাম বেঁধে না রেখে বাজার চাহিদার ওপর ছেড়ে দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

দিন-রাত বুদ্ধিদীপ্ত আর হাড়ভাঙা শ্রমে-ঘামে একটু একটু করে জমে প্রবাসীদের আয়। স্বজনদের ভালো রাখতে যার প্রায় সবটুকুই দেশে পাঠান তারা।

সরকারি হিসাব মতে, প্রবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানাচ্ছে, প্রবাসীদের আয় পাঠানো কমতে কমতে গেল সেপ্টেম্বর নেমেছে মাত্র ১৩৪ কোটি ৩৭ লাখ ডলারে। যা ২০২০ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। চলতি মাসেও মিলছে না ভালো কোনো ইঙ্গিত।

অথচ এক কোটির বেশি প্রবাসীর কাছ থেকে প্রতিমাসে খুব সহজে ২৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি ডলার দেশের রিজার্ভে যোগ করা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ চলতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেতে পারতো, কিন্তু পাবে হয়তো ২০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যেটা আসবে তা ভঙুর এবং সেটা আরো কমতে থাকবে হয়তো।

তাহলে সুযোগ থাকার পরও কেন অর্ধেকটাই বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ?

এক প্রবাসী বলেন, আমি একটা মাধ্যমে (হুন্ডিতে) টাকা পাঠিয়ে যদি প্রতি ডলারে ছয় থেকে সাত টাকা বেশি পাই তাহলে কেন সরকারি মাধ্যমে যাবো। আপনি আমকে উৎসাহ দিচ্ছেন, উৎসাহে তো আমার পেট ভরবে না!

প্রবাসীদের বক্তব্যে এই বিষয়টি পরিষ্কার যে, নিরাপত্তার ধুয়া তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে বাফেদা ডলারের দাম বাজার মূল্যের চেয়ে কম নির্ধারণ করাতেই বৈধ চ্যানেলে ডলার পাঠাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে দেশকে।

অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, জোর করে টাকাকে শক্তিশালী দেখাতে গিয়েই প্রবাসী আয়ে ধস নামানোর পাশাপাশি দেশের রিজার্ভকে ঝুঁকিতে ফেলছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন ডলারের যে রেট দেয়া হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নাই। বিষয়টা হল, একটা লেভেলে রাখতে হবে তাই রাখা।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন আমার হাতে যখন কিছু রিজার্ভ আছে, একেবারে শূন্য হয়ে যায়নি- এই অবস্থায় (ডলারের মূল্য) বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। সেটা করলে কেউ যদি কারসাজি করার চেষ্টা করে সেক্ষেত্রে বাজারে হস্তক্ষেপ করার মতো টুল তো হাতে আছে। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে গেলে তখন আর সেই সুযোগও থাকবে না।

দাবির পেছনে ২০০৩ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় দুদশকের হিসাবও মেলে ধরছেন তারা। এ অবস্থায় আবারও ঝুঁকিমুক্ত আগের পরীক্ষিত পথে হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আরও আগেই বাজারকে আমরা স্থিতিশীল করে ফেলতে পারতাম, যদি প্রথম থেকেই এটাকে বাজারভিত্তিক করে দেয়া হতো।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা তো একটা পরীক্ষিত মডেল, বাংলাদেশেই পরীক্ষিত এবং সেটা আমাদের সুফল দিয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার কেউ নির্ধারণ করতো না- বাংলাদেশ ব্যাংকও করতো না, বাফেদাও করে দিতো না। ছেড়ে দিলেই যে দাম অনেক বেড়ে যাবে, এমনটা হবে না। হলে হুন্ডির মার্কেটে তো এতো দিনে তা হয়ে যেতো।

এ অবস্থায় এফবিসিসিআই বলছে, প্রবাসী আয়ের যোগান বাড়াতে না পারলে চাপে থাকা আমদানি বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানি আয়ে।

সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সত্যিকার অর্থে হয়তোবা একেবারে ছোট খাটো দশ বিশ হাজার ডলারের এলসিগুলো এই রেটের সুবিধাটা পাচ্ছে। এর উপরে যারা তারা কিন্তু পাচ্ছে না, যে কারণে ব্যবসায়ীদের খরচা বেড়ে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণের নামে গেল বছরের মে থেকে প্রতিবারই আগের চেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করে একদিকে যেমন ডলারের বাজার প্রতিযোগিতা নষ্ট করছেন তেমনি মজুতকারীদের পরিষ্কার পূর্বাভাস দিয়ে ডলার আটকে রেখে অর্থনীতিকে জিম্মি করার সুযোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ