• ঢাকা বুধবার
    ১৫ মে, ২০২৪, ৩১ চৈত্র ১৪৩১

‘বাচ্চাটার খাওয়ার কিছু নাই, সব নিয়ে গেছে’

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২১, ১০:৩৯ পিএম

‘বাচ্চাটার খাওয়ার কিছু নাই, সব নিয়ে গেছে’

রংপুর ব্যুরো

‘যখন বাড়িতে আগুন দেয়, তখন আমি বাচ্চা নিয়ে জমিতে লুকিয়ে ছিলাম। বাড়ির সব টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। বাচ্চাটার খাওয়ার কিছু নাই।’ কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকেল রায়।

 

রোববার (১৭ অক্টোবর) রাত তখন সাড়ে ১০টা। একদল দুর্বৃত্ত এসে উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া-বটতলা ও বড়করিমপুর গ্রামের জেলেপাড়ায় হামলা চালায়। ঘর-বাড়িতে চালায় ভাঙচুর ও লুটপাট। শেষে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। 



 

সোমবার (১৮ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, রাতের হামলা, ভাঙচুর আর অগ্নিসংযোগের চিহ্ন। একেবারে পুড়ে গেছে ১৫টি পরিবারের ২১টি বাড়ির সবকিছু। সব মিলিয়ে গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা নিয়ে গেছে গরু–ছাগল, টাকা-পয়সা ও গয়না। গ্রামজুড়ে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যরা।

 

নয়নী রানি এক বাসিন্দা বলেন, সামনে মেয়ের বিয়ে। বিয়ের জন্য কিছু জিনিস কেনা হয়েছিল। শাড়ি-গয়না সব শেষ হয়ে গেছে। ঘরে থাকা ১ লাখ টাকাও লুট হয়েছে।

 

কাঁদতে কাঁদতে কিরোন রানি নামের এক নারী বলছিলেন, ‘এই দ্যাশোত থাকার চাইতে মরি যাওয়াই ভালো। ভোরে আসি দেখি, কিচ্চু নাই। সোনা দানাসহ সব নিছে।’



 

সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসনসহ সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।

 

প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের মাঝে নগদ ২ হাজার টাকা করে অর্থ সহযোগিতা করেছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। অর্থ সহযোগিতা বিতরণ শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা এখন অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সজাগ রয়েছি তাদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে।



 

ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে জেলেপাড়ায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপার, র‌্যাব-১৩-এর অধিনায়ক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশ।

 

এরই মধ্যে এ ঘটনায় ৪২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।

 

টিআর/ডাকুয়া

আর্কাইভ