• ঢাকা শনিবার
    ১১ মে, ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প অভিযুক্ত : মার্কিন রাজনীতিকরা যা বললেন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩, ০২:২৪ এএম

ট্রাম্প অভিযুক্ত : মার্কিন রাজনীতিকরা যা বললেন

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করেছে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের একটি আদালত। পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য দেয়া ‘হাশ মানি’ মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) এ অভিযোগ আনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টকে বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো। ৭৬ বছর বয়সী ট্রাম্প আগামী তথা ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে প্রার্থিতা নিশ্চিতের লড়াইয়ে রয়েছেন। বলা হচ্ছে, এখন যেকোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অভিযুক্ত হওয়ার পর ট্রাম্প ইতোমধ্যে ইতোমধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া তার দল রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসিও।

যৌনকর্মীকে ঘুষ (হাশ মানি) দেয়াকে কেন্দ্র করে হওয়া মামলায় অভিযুক্ত করার বিষয়টি ‘রাজনৈতিক নিপীড়ন’ বলে অভিহিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশ হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান এ নেতা বলেন, ‘এটা সর্বাত্মক রাজনৈতিক নিপীড়ন ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ঘটনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই ট্রাম্প টাওয়ার তৈরির সময় থেকে আপনাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগ পর্যন্ত কট্টর বামপন্থি ডেমোক্র্যাটরা এই দেশের কঠোর পরিশ্রমী নারী-পুরুষের সঙ্গে শত্রুতা করে আসছে। তারা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ আন্দোলনকে ধ্বংস করতে এখনও রাজনৈতিক উইচ-হান্ট অব্যাহত রেখেছে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে আটকানোর জন্য নির্বিচারে মিথ্যাচার, প্রতারণা ও চুরির আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এখন তারা যা করলো তা অকল্পনীয়। একজন সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে।’

সিদ্ধান্ত অমার্কিনসূলভ: রন ডেসান্টিস


ফ্লোরিডার গভর্নর ও আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডেসান্টিস বলেছেন, গ্রান্ড জুরির এ সিদ্ধান্ত ‘অমার্কিনসূলভ’। এক টুইটার বার্তায় তিনি আরও বলেছেন, একটা বিশেষ গোষ্ঠীর ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা এগিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা আইনের শাসনকে বিপথগামী করতে পারে।’

ফ্লোরিডা গভর্নর আরও বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তে যদি ট্রাম্পকে প্রত্যাবাসনের অনুরোধ করা হয়, তাতে কোনো সহযোগিতা করবে তার রাজ্যের প্রশাসন।

এটা একটা জুলুম: মাইক পেন্স


সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আমলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান নেতা মাইক পেন্স বলেছেন, ‘এটা একটা জুলুম। আমি আরও মনে করি, যখন মার্কিন জনগণ নানা সমস্যায় জর্জরিত, ঠিক সেই সময় এই সিদ্ধান্ত আমাদের দেশকে আরও বিভাজনের দিকে ঠেলে দেবে।’

এছাড়া এক টুইট বার্তায় পেন্স বলেছেন, এক আর্থিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করার ঘটনা নজিরবিহীন। এটা জুলুম। লাখো মার্কিনির কাছে এটা রাজনৈতিক নিপীড়ন ছাড়া আরও কিছুই নয়।’  
আইন সবার জন্য সমান: ডেমোক্র্যাট চাক শুমার

মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রত্যেক মার্কিনির জন্য যে আইন ট্রাম্পের জন্যও সেই আইন। তিনি আইনি ব্যবস্থা ও গ্রান্ড জুরি থেকে সুবিধা পেতে সক্ষম হবেন, রাজনীতি থেকে নয়। প্রকৃত সত্য ও আইন অনুযায়ীই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে।’

ডেমোক্র্যাট এ নেতা আরও বলেন, ‘আমি ট্রাম্পের সমালোচক ও সমর্থক উভয়কেই বলব, আপনারা পুরো প্রক্রিয়াকে আইনের গতিতে ও শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দিন।’

এটা প্রতিশোধপরায়ন সিদ্ধান্ত: রিপাবলিকান নেতা নিকি হ্যালি


ট্রাম্প শাসনামলে জাতিসংঘে ‍যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিক নিকি হ্যালি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত যতটা না ন্যায়বিচারের, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিশোধমূলক।’

নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কর্মকাণ্ড আমি যতটা দেখেছি, তাতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন। এবং আমরা জানি যে আপনি যখন এমন রাজনৈতিক নিপীড়নে জড়াবেন, তখন সেটা যতটা না ন্যায়বিচার, তার চেয়ে বেশি প্রতিশোধ হবে।’

আমেরিকার জন্য দুঃখের দিন: রুডি গুইলানি 


ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী রুডি গুইলানি এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ। তাও এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যিনি ওয়াশিংটনে গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক শ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।’

এক টুইট বার্তায় গুইলানি আরও বলেন, আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পকে আটকাতে ‘ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগের দায়িত্বহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টার পথ ধরে নিউইয়র্কের গ্রান্ড জুরি তাকে অভিযুক্ত করেছে। আমেরিকার জন্য এটা দুঃখের দিন।’

কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়: ন্যান্সি পেলোসি


কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সাবেক স্পিকার ও ডেমোক্র্যাট নেত্রী ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, গ্রান্ড জুরি প্রকৃত সত্য ও আইনের ওপর ভিত্তি করেই পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং প্রত্যেকেরই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের অধিকার রয়েছে।’

ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা অ্যাডাম শিফ বলেছেন, সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করার ঘটনা নজিরবিহীন। এভাবে ধনী ও ক্ষমতাবানদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’

এটা সবে শুরু: মাইকেল কোহেন


সিএনএনের এক প্রতিবেদন মতে, ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন বলেছেন, এই অভিযুক্ত করার ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এটা কেবল শুরু মাত্র।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করা হলো। তবে এটা এই অধ্যায়ের শেষ নয়। এটা কেবল শুরু।’

রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ এই সিদ্ধান্তকে ‘ভিত্তিহীন, আবর্জনা ও তুচ্ছ’ বলে অভিহিত করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটা আমাদের দেশের জন্য একটা সন্ধিক্ষণ। ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার ঘটনাটির মধ্যদিয়ে আইনের শাসনের মৃত্যু হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠাতারা ফুপিয়ে কাঁদছে। রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে আইন সবার জন্য সমান ও ন্যায্য হওয়ার কথা ছিল। এটার কারও রাজনৈতিক শত্রুকে আক্রমণের অস্ত্র হওয়া উচিত নয়।’

আর্কাইভ