• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২
জল, স্থল ও আকাশ

গাজা নগরীতে দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলা ইসরায়েলের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ১১:০১ পিএম

গাজা নগরীতে দুই দিনে দেড় শতাধিক হামলা ইসরায়েলের

ইসরায়েলের বোমা হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আজ বুধবার গাজায়ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরুর পর সেখানে প্রচণ্ড হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। জল, স্থল ও আকাশ—তিন পথেই গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় এ শহর এলাকায় হামলা হচ্ছে। এমন নৃশংসতার মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে গাজা নগরী ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের জন্য সাময়িক একটি পথ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এমনকি নিজেদের সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরের আপত্তির পরও গতকাল মঙ্গলবার গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এ অভিযান নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল তারা। ইসরায়েলের দাবি, গাজায় দুই থেকে তিন হাজার হামাস সদস্য রয়েছেন। তাঁদের নির্মূল করতেই এ অভিযান শুরু করা হয়েছে।

ইসরায়েলের অভিযান শুরুর ঘোষণার আগেই সোমবার রাত থেকে গাজা নগরীতে ইসরায়েলের সেনাসদস্য ও ট্যাংক প্রবেশ শুরু করে। আজ বুধবার অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সেখানে হাজার হাজার সেনাসদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে দুই দিনে শহরটিতে দেড় শতাধিকবার বিমান ও কামান হামলা চালানো হয়েছে।

আজ সকালে গাজার হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের রাতে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই গাজা নগরীর। এর মধ্যে নগরীর শাতি শরণার্থীশিবিরে এক শিশু ও তার মা রয়েছেন। পরে সন্ধ্যা নাগাদ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, এদিন গাজা নগরীতে ৩৮ জনসহ উপত্যকাটিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের এমন নৃশংসতার মুখে গাজা নগরীর বাসিন্দা হামদি আবু তাবক বলেন, ‘সব সময় বোমাবর্ষণ চলছেই। নিরাপদ কোনো জায়গা নেই। আমরা তো সাধারণ মানুষ। রাজনীতি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই সন্তানেরা যেন পড়াশোনা করতে পারে। তবে দুই বছর ধরে তারা স্কুলের বাইরে। বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান জানাই, আমাদের পাশে দাঁড়ান। নিষ্ঠুর এই যুদ্ধ বন্ধ করুন।’

এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় অভিযান–সংক্রান্ত ইসরায়েলের কিছু নথি হাতে এসেছে আল–জাজিরার। তাতে দেখা গেছে, চলমান অভিযানের সমুদ্রতীরবর্তী কিছু এলাকা ছাড়া পুরো উপত্যকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরায়েল সরকারের। এরই মধ্যে সংঘাতের প্রায় দুই বছরে গাজায় প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

সাময়িক পথ চালুর ঘোষণা ইসরায়েলের জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গত আগস্টে গাজা নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় কমবেশি ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস ছিল। স্থল অভিযান শুরুর আগে থেকেই সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এমন নির্দেশনা পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে বিগত দিনগুলোতে গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষ পালিয়েছেন।

স্থল অভিযান শুরুর পর আজও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গাজা নগরী ছেড়ে দক্ষিণে আল–মাওয়াসি এলাকার দিকে পালাতে দেখা গেছে। এ এলাকাকে নিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। এরপরও সেখানে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার আল–নাসের হাসপাতালের একটি সূত্র আল–জাজিরাকে জানিয়েছে, আল–মাওয়াসিতে একটি তাঁবুতে হামলা হলে মারা যান অন্তত পাঁচজন।

তবু কোনো উপায় না পেয়ে আল–মাওয়াসির দিকে যাচ্ছিলেন ৬৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের নৃশংসতার মুখে এ নিয়ে সপ্তমবার বাস্তুচ্যুত হলেন তিনি। এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আমি আমার সন্তান ও নাতি–নাতনিদের নিয়ে খুবই ভয়ের মধ্যে আছি। আমার সঙ্গে শুধু একটি কম্বল আছে। ২৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই অন্য কিছু নিতে পারিনি।’

এদিকে গাজা নগরী থেকে বাসিন্দাদের পালানোর জন্য একটি সাময়িক পথ খুলে দেওয়া ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আভিচে আদ্রি বলেন, আজ দিনের মধ্য সময় থেকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য পথটি খোলা থাকবে। এখন পর্যন্ত গাজার উপকূলবর্তী একটি পথ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে যাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনিরা।

ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মুখে গাজা নগরী থেকে দক্ষিণ দিকে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। আজ বুধবার গাজার মধ্যাঞ্চলে

গাজা নগরীতে ইসরায়েলের হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন পোপ চতুর্দশ লিও। আজ তিনি বলেন, ‘গাজায় ভয়ের মধ্যে এবং অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতিতে থাকা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমি সংহতি প্রকাশ করছি। তাদের আরও একবার নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে। আমি আবারও যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি এবং সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি।’

গাজা নগরীতে ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশও। তাদের মধ্যে রয়েছে কাতার, সৌদি আরও ও চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধির বিরোধিতা করছে বেইজিং। একই সঙ্গে বেসামরিক মানুষের ক্ষতি করে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এমন সব কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে।

আর্কাইভ