• ঢাকা শুক্রবার
    ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাভারে একটি সেতুর অভাবে শহরের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ১৩ গ্রামের মানুষ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২২, ১০:২৮ পিএম

সাভারে একটি সেতুর অভাবে শহরের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ১৩ গ্রামের মানুষ

সাভার প্রতিনিধি

ঢাকার সাভারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বংশী নদী নিকটেই সাভারের ব্যস্ত শহর। কিছুটা দূরত্বে ধামরাই শহরও। কিন্তু শহুরে সুবিধা সহজে ভোগ করার সৌভাগ্য হয় না ১৩ গ্রামের মানুষের। আধুনিক শহরের ছোঁয়া পেতে তাদের চেপে বসতে হয় খেয়া নৌকায়। নদী পার হয়ে মেলে শহরের দেখা।

একটি ব্রিজের অভাব যেন শহুরে ছোঁয়া থেকে দূরে রেখেছে গ্রামগুলোকে। সম্প্রতি ঢাকার ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর এলাকায় গিয়ে খেয়া নৌকায় পার হতে দেখা যায় গ্রামবাসীকে। তাদের সঙ্গে কথা বলেই জানা যায় এ সব তথ্য। যুগের পর যুগ খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হতে হচ্ছে। দুই উপজেলার গ্রামবাসী দীর্ঘদিন সেতুর দাবি জানিয়ে এলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একাধিক খেয়া নৌকার মাধ্যমে ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়ন এবং সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের মানুষ নদী পাড়ি দিয়ে সাভার উপজেলার নামা বাজারে যাতায়াত করছে। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে স্কুল-কলেজের অন্তত কয়েকশো শিক্ষার্থী রয়েছে।



কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামটি ধলেশ্বরী নদীর দুপাশে অবস্থিত। ফোর্ডনগর উত্তরপাড়ার সঙ্গে একটি ব্রিজ থাকায় সেটি দিয়ে খুব সহজেই সাভার মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। অপরদিকে, ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া, কান্দাপাড়া, চর বরদাইল এবং সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের খান পাড়া, ভূতা পাড়া, মোল্লা পাড়া, ভাটির চর, খালাসি পাড়া, গেলে পাড়া, উলাইল চর, খাসের চর, লাঙ্গুলি, কামুরা এ ১৩ টি গ্রামের লক্ষাধিক বাসিন্দাদের শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতে হয় খেয়া নৌকা।

বিপাকে কৃষকরা এই দুই পাড়ের ইউনিয়ন দুটির বাসিন্দাদের প্রায় ৭০ শতাংশই সরাসরি কৃষি কাজে নিয়োজিত। আর বাকিরা পার্শ্ববর্তী সাভার উপজেলার নামা বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা ও চাকরির সঙ্গে জড়িত। সেতু না থাকায় ওই পাড়ের কৃষি জমিতে উৎপাদিত ফসল নিয়ে বাজারে যেতে নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়ায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো কৃষক। 

ফোর্ডনগর উত্তর পাড়ার বাসিন্দা কৃষক লাল মিয়া বলেন, আমাগো গ্রামের মুটামুটি হগলের জমিই নদীর হেইপাড়। প্রতিদিন ২/৩ বার কইরা ক্ষেতে যাওন লাগে ফসল দেহনের লিগা। ফসল কাইট্টা আনতে হইলে নৌকায় কইরা আনন লাগে। একবার কামলা দিয়া খেয়া ঘাটে ফসল আইনা হেরপর আবার নৌকাত কইরা নদী পাড় কইরা বাজারে নিতে ম্যালা খরচ। আবার পরিশ্রমও অয় অনেক। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিঃ নদী পাড়ের এই ১৩টি গ্রামে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি কিন্ডার গার্টেন ও ৩টি মাদ্রাসা রয়েছে। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফোর্ডনগর উত্তর পাড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাভারে বসবাসরত ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নদী পাড় হতে হয়। এ ছাড়া এ পাড়ের গ্রামগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ পড়ুয়া প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী সাভারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করায় প্রতিদিন তাদেরও খেয়া পাড় হতে হয়।

এ ব্যাপারে সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আলতাফুর রহমান বলেন, অনেক সময় খেয়াঘাটের অন্য পাড়ে থাকে নৌকা তারা যাত্রী নিয়ে এই পাড়ে আসলে আমাদের উঠতে হয় তখন স্কুলে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। শুধুমাত্র আমার স্কুলেরই ৫০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন নদী পার হয়ে স্কুলে যায়। এদের মধ্যে অনেকেই সাঁতার না জানায় অনেক ভয়ে ভয়ে নদী পার হতে হয়।

ফোর্ডনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিদিনি নদীর অপর প্রান্ত থেকে খেয়া পাড় হয়ে প্রায় ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক আমাদের স্কুলে আসেন। বৃষ্টি হলে নদী পাড়ে কাঁদার কারণে নৌকায় উঠাটা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। তার পর অনেক শিক্ষার্থী সাঁতার জানে না। একটি সেতু হলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। 

চিকিৎসা পেতে বিরম্বনা, কোনো হাসপাতাল না থাকায় এ ১৩টি গ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা নিতে সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। নৌকা ছাড়া পারাপারের সুযোগ না থাকায় এ সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

ফোর্ডনগরের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, রাত ১২টার পর ঘাটে কোনো নৌকা থাকে না এ সময় ইমার্জেন্সি কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী কোনো নারীকে পারাপারে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ফোর্ডনগরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানটি দক্ষিণ ফোর্ডনগরে অবস্থিত হওয়ায় নদীর অপর পাড়ের কেউ মারা গেলে তার মরদেহটি নৌকা করে পাড় করে এপাড়ে এনে দাফন করতে হয়। এ বিষয়টি খুবই কষ্টদায়ক।

এ ব্যাপারে কুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমি এবারই প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা ফোর্ডনগরে ধলেশ্বরী নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে নানা সমস্যায় পরছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি তুলে ধরবো। 

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ফোর্ডনগরের ধলেশ্বরী নদী পাড়ের ওই এলাকাটিতে সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে এটি এলজিইডির তালিকাভুক্তও করা হয়েছে। 

এএল/
আর্কাইভ