• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৯ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটার পতিত জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৩, ০৫:০২ এএম

চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটার পতিত জমিতে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে

মিঠুন মাহমুদ, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটার পতিত জমিতে এখন ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে। পতিত জমিতে ধান ও সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় ভাটা মালিকরাও আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে ৩৮৫ বিঘা জমিতে ধান ও সবজি চাষ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫ মাস ইটভাটা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইটভাটা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা অন্য কাজ করতে না পারায় বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েন। শ্রমিকদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পতিত জমি চাষের আওতায় আসায় মালিক ও শ্রমিকরা লাভবান হচ্ছেন। প্রতি বছর ইটভাটায় ফসল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩৮৫ বিঘা জমিতে ৩শ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সব ফসল ও সবজি প্রায় ১ কোটি টাকায় বিক্রি হবে। ১ ইঞ্চি জমিও পতিত থাকবে না- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে চলতে ইট ভাটায় চাষ শুরু। পতিত জমিতে ফসল চাষে আগ্রহী করতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে সর্ব প্রথম চুয়াডাঙ্গায় ইটভাটার পতিত ৩০৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ শুরু হয়। এ উদ্যোগ নেন সে সময় দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষ। ভাটা মালিকরা আগ্রহী হচ্ছেন চাষে। চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলায় রয়েছে ৯৪টি ইটভাটা। ২০২৩ সালে চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় ৩৮৫ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। এর মধ্য ৩৭৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান ও ১০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। ইটভাটার পতিত জমির মাঠ গুলো সবুজ ফসলে ভরে গেছে।

লাউয়ের মাচায় ঝুলছে লাউ। আর সাদা ফুলে ফুলে ভরে রয়েছে গাছ। বাতাসে দোল খাচ্ছে আমন ধানের গাছগুলো। মাটির ঢিবির উপর লাগানো হয়েছে মিষ্টি কুমড়া, ঢেড়স, লালশাক। কলা গাছ, ঘাস, কপির বীজতলাসহ রয়েছে অনেক ধরণের ফসল। কলা গাছে ঝুলছে  কলার কাদি।

সদর উপজেলায় ৭৫ বিঘা, আলমডাঙ্গায় ৩০ বিঘা, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৫০ ও জীবননগর উপজেলায় ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ হচ্ছে। এছাড়া আলমডাঙ্গায় ১০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে।

২০২১ সালে ইটভাটায় ৩২৭ বিঘা ও ২০২২ সালে ৩৫৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়। প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষ। উর্বর জমি হওয়ায় ফসল উৎপাদন ভাল হয়। পতিত জমিতে চাষ করে মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। ইট বিক্রি ও ফসল চাষ দুটি লাভজনক হয়ে উঠেছে।

বৈশাখ মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায় চুয়াডাঙ্গার সকল ইটভাটার ইট উৎপাদন কার্যক্রম। এ সময় পতিত জমি গুলো চাষের আওতায় আনা হয়। জেলার ৯৪টি ইটভাটার আওতায় রয়েছে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি। সকল ভাটা চাষের আওতায় আসলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ইভাটার শ্রমিক হাচান, করিম ও ইকরামুল বলেন, শীতের শেষে ইট কাটা বন্ধ হলে ভাটা চলেনা। তখন বেকার বসে থাকতে হয়। কারণ আমরা অন্য কাজ তেমন একটা করতে পারিনা। মালিকরা বন্ধের সময় ভাটায় ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। মালিকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি আমরা কাজ করে হাজিরা পাচ্ছি। সংসার ভালই চলছে। অভাব অনটন আর থাকছে না।

কেডিবি ইটভাটার ম্যানেজার মশিউর রহমান বলেন, ভাটায় ১০ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করছি। শ্রমিকদের নিয়ে পরিচর্যা করতে হয়। গত বছর ধান চাষ করলেও এবার লাউ চাষ করছি। মাচায় লাউ ঝুলছে। প্রতি পিচ লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা করে। প্রতিদিন বাজারে ৩শ-৫শ লাউ বিক্রি হচ্ছে। লাউ চাষ লাভজনক বলে জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা ভালাইপুর এলাকার এসবিএম-১ ইটভাটা মালিক মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, অফ টাইমে ভাটার জমিতে আমরা ধানসহ অন্য ফসল চাষ করছি। মাটির ঢিবির উপর শাক, মিষ্টি কুমড়া চাষ করছি। এক ইঞ্চি জমি পতিত রাখতে চাই না। শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ইটভাটার জমি এক সময় অলস পড়ে থাকতো। এখন চাষের আওতায় আসছে প্রতি বছর। পতিত জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভাটা বন্ধের সময় ধান, সবজি, ফলসহ অন্য কিছু আবাদ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসগুলো মালিকদের চাষে আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এবার ৩৮৫ বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে। ইটভাটার সব পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চাষে আগ্রহী করে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

আর্কাইভ