• ঢাকা শুক্রবার
    ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

তালেবানের আগ্রাসন মেনে নেবে না বিদ্রোহীরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১, ০৩:২৩ পিএম

তালেবানের আগ্রাসন মেনে নেবে না বিদ্রোহীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কোনো রকম প্রতিরোধ ছাড়াই রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। একমাত্র পঞ্জশির উপত্যকা এখনও দখলে নিতে পারেনি সশস্ত্র সংগঠনটি। তবে উপত্যকা ঘেরাও করে রেখেছে তারা। কিন্তু তালেবানের কোনো ধরনের আগ্রাসন মেনে নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তালেবান-বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠী ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান (এনআরএফ)। খবর বিবিসির।

এনআরএফ-এর বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান আলী নাজারি বিবিসিকে বলেছেন, ‘তারা শান্তিপূর্ণ সমঝোতা চান। কিন্তু যদি তা ব্যর্থ হয়... তাহলে আমরা কোনো ধরনের আগ্রাসন মেনে নেব না।

এ দিকে তালেবান বলছে, ‘পঞ্জশির উপত্যকায় এই গোষ্ঠীর শক্তিশালী ঘাঁটি এবং বিরোধীদেরকে ঘেরাও করা হয়েছে। এনআরএফ সদস্যরাও বলেছেন, ‘রাজধানী কাবুলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দিকে এখন অগ্রসর হচ্ছে তালেবানরা।

অপরদিকে তালেবানের হাতে ক্ষমতা হারানো আফগান সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ এখন পঞ্জশিরে রয়েছেন। তিনিও এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তালেবানরা ওই উপত্যকার প্রবেশমুখে তাদের বাহিনী জড়ো করছে।

হামলা ঠেকানোর জন্য পঞ্জশির অঞ্চল- বিশেষ করে পঞ্জশির উপত্যকার সুনাম রয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত সেনাদের হঠানো এবং ১৯৯০-এর দশকে তালেবানদের হটিয়ে দেয়ার জন্য ওই অঞ্চল বিখ্যাত।

এখনও ওই অঞ্চলটি এনআরএফ-এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আফগান প্রতিরোধের নায়ক বলে পরিচিত আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ।

তিনি ছিলেন একজন শক্তিশালী গেরিলা কমান্ডার, যিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এরপর তিনি ১৯৯০-এর দশকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগান সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরও ২০০১ সালে তাকে হত্যার আগ পর্যন্ত তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে তিনিই ছিলেন প্রধান বিরোধী কমান্ডার।

নাজারি জানান, সারা দেশ থেকে স্থানীয় যোদ্ধারা পঞ্জশিরে জড়ো হচ্ছেন। তারা এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এমন যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই গোষ্ঠীর আওতায় প্রতিরোধের জন্য হাজার হাজার বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

এই মুখপাত্র বলেন, ‘যাই হোক না কেন, কোনো ধরনের যুদ্ধে যাওয়ার আগে আমরা শান্তি এবং সমঝোতার চেষ্টা করব। এনআরএফ-এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো দেশে বিকেন্দ্রীকৃত একটি শাসন প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, ‘এনআরএফ বিশ্বাস করে, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আফগানিস্তানের অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলো সামনে আনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তান এমন একটি দেশ, যা জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে গঠিত এবং সেখানে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। এটি একটি বহু সংস্কৃতির রাষ্ট্র, তাই এখানে ক্ষমতার বণ্টন দরকার। এই বণ্টন এমনভাবে হতে হবে, যাতে সবাই নিজেদের ক্ষমতায় দেখতে পায়।

তার মতে, রাজনীতিতে কোনো একটি দলের আধিপত্য থাকলে অন্তর্কোন্দল চলতে থাকে এবং বর্তমান সংঘাতও শেষ হবে না। নাজারি বলেন, ‘আমরা শান্তি পছন্দ করি, আমরা শান্তি এবং আলোচনাকেই অগ্রাধিকার দেই। আমরা যদি দেখি যে অন্যপক্ষ এতে আন্তরিক নয় এবং তারা পুরো দেশের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে তাহলে আমরা কোনো ধরনের আগ্রাসন মেনে নেব না। আর আমরা এটা প্রমাণ করেছি। গত ৪০ বছরের রেকর্ড অনুযায়ী আমাদের অঞ্চল বিশেষ করে পঞ্জশির উপত্যকা এলাকা কেউ দখল করতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘রেড আর্মি তাদের সর্বশক্তি দিয়েও আমাদের পরাজিত করতে পারেনি... আমার মনে হয় না এখন আফগানিস্তানে কোনো বাহিনী রেড আর্মির মতো শক্তিশালী। আর ২৫ বছর আগেও তালেবান... এই উপত্যকা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, তারা চরম পরাজয়ের মুখে পড়েছিল।

জেডআই/এম. জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ