• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাখমুতে মরছে বহু রুশ সেনা

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৩, ০৭:১২ পিএম

বাখমুতে  মরছে বহু রুশ সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ধ্বংসস্তূপের মাঝে যুদ্ধের একটি নতুন সীমারেখা এঁকেছে ইউক্রেন, আর সেই রেখাটি হলো বাখমুত। কৌশলগতভাবে এর গুরুত্ব কম হলেও, এর দখল নিয়ে যুদ্ধে হাজার হাজার লোক মারা গেছে। সাত মাসেরও বেশি সময় আগে এই লড়াই শুরু হয়। ইউক্রেন যুদ্ধে এটি এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম এক লড়াই। খবর বিবিসি।

বাখমুত এবং এর আশপাশে তীব্র লড়াই চলার মাঝে শহরটির দক্ষিণ অংশে মোতায়েন দুটি ইউক্রেনীয় সেনা ব্রিগেড গত সপ্তাহে বিবিসিকে তাদের অবস্থানে ঢুকতে দিয়েছিল। এখানে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রুশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত ইউনিট এবং ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যদের মুখোমুখি হয়েছে, যারা তাদের ট্রেঞ্চের ওপর দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

সৈন্যরা বলছে, রুশ পক্ষের হতাহতের সংখ্যা তাদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে শত্রুরা নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে শহর এবং তার আশপাশের গ্রাম দখলের চেষ্টা করছে।

‘তারা আমাদের কাছে ঘেঁষতে পারবে না। আমরা এখান থেকে চারিদিকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পাই,’ রুশ অবস্থানের দিকে নির্দেশ করে বলছিলেন ২৬-বছর বয়স্ক এক দাড়িওয়ালা সৈনিক, ওয়্যারলেসে যার কল সাইন ‘ডর্ফ’। আমাদের যা কিছু আছে এখান থেকে তা দিয়েই আমরা শত্রুর ওপর আঘাত হানতে পারি।

অস্ত্র আর সংখ্যার বিচারে রুশ বাহিনীর শক্তি ইউক্রেনের বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু দক্ষিণের একটি পাহাড়ে যেখানে থার্ড সেপারেট অ্যাসল্ট ব্রিগেডের ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ইউনিটটি মোতায়েন রয়েছে তারা হার মানতে রাজি না। এই ইউনিটকে ডাকা হয় ‘থ্রি-স্টর্ম’ নামে। রুশ গোলন্দাজ বাহিনীর গোলা তাদের কাছাকাছি জায়গায় এসে পড়ছে। গোলার বিস্ফোরণে ট্রেঞ্চের কাঠের ছাদ যখন থরথর করে কাঁপতে থাকে তখন মেঠো ইঁদুরগুলি কাঠের পাটাতনের ওপর ভয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে। ট্রেঞ্চের কোণে বহু পুরনো একটি ফিল্ড টেলিফোন বসানো রয়েছে। কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে এমন দৃশ্য মোটেই অচেনা বলে মনে হবে না।

রুশ কিংবা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী কেউই বাখমুত বা অন্য কোন যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা সরকারিভাবে প্রকাশ করেনি। তবে এখানকার লড়াইয়ে প্রায় পরিত্যক্ত এই শহরটি এখন একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেন দাবি করে যে, তার নিজের প্রতি একজন সৈন্যের বিপরীতে রাশিয়ার সৈন্য মারা গেছে সাতজন করে। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে রাশিয়া দাবি করেছে যে বাখমুত দখলের যুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা ২২০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা হত্যা করেছে। তবে এসব সংখ্যার কোনটিই স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।

এক সপ্তাহ ধরে শহরটির দখলের লড়াইয়ে থ্রি-স্টর্ম কোম্পানির সৈন্যরা ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যদের মুখোমুখি হয়েছে। ‘প্রতি দু’ঘণ্টা পর পর আমাদের মধ্যে লড়াই হয়েছে,’ বলছিলেন তিনি, ‘আমার অনুমান, একটি একক কোম্পানি প্রতিদিন ৫০ জন করে শত্রু নির্মূল করেছে।’ এই সংখ্যা নিয়ে সন্দেহের প্রশ্নে তিনি উল্লেখ করেন, আকাশ থেকে তোলা ছবির মাধ্যমে এই সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রুশ গাড়ি আসে, সেখান থেকে ৫০ জন সৈন্য বের হয়। সারা দিন কেটে যায়, আবার আরও ৫০ জন সৈন্য আসে। সেই তুলনায় তার নিজের কোম্পানিতে হতাহত হয়েছে সামান্যই।

ইউক্রেনের ৬০০-মাইল দীর্ঘ পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্ট বরাবর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। আশপাশের জায়গার তুলনায় থ্রি-স্টর্ম ইউনিট যে পাহাড়ের ওপর ঘাঁটি গেড়েছে তার জমি বেশ শুকনো। বসন্ত মৌসুম এসেছে নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই। ফলে শীতের সময় যে ভূমি ছিল কঠিন সেটি এখন থকথকে কাদায় পরিণত হয়েছে। এটা অবশ্য প্রতিরোধকারী ইউক্রেনীয়দের জন্য সুখবর। সেখানে যাওয়ার জন্য আমরা পায়ে হেঁটে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের অনুসরণ করছিলাম। রওনা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বুট জোড়া পুরু কাদার স্তরে ভারী হয়ে যায়। একটি সামরিক অ্যাম্বুলেন্স টলতে টলতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য গাড়িটির শুঁয়োপোকার মতো ট্র্যাক মাটি কামড়ে ধরে চারিদিকে কাদা ছিটিয়ে যাচ্ছিল।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে ওয়াগনার গ্রুপের দু’জন বন্দি সৈন্য জানিয়েছে যে যুদ্ধের ময়দানে পাঠানোর আগে অন্ধকারে বনের মধ্য দিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার বাইরে তাদের প্রশিক্ষণ হয়েছে খুব সামান্যই। তাদের শর্ত ছিল: ছয় মাস ফ্রন্টে দায়িত্ব পালনের পর থেকে তারা মুক্ত হবে, যদি ততদিন পর্যন্ত তারা বেঁচে থাকে।

গত দু’মাস ধরে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে এবং বাখমুতকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের স্থল বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলছেন, তার বাহিনী বাখমুতে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখবে। ‘দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতিটি দিন শত্রুর আক্রমণাত্মক ক্ষমতা কমাতে আমাদের হাতে মূল্যবান সময় এনে দেয়,’ বলছেন তিনি, এর ফলে ওই এলাকায় তিনি আরও সেনা পাঠাতে পারেন। কিন্তু বাখমুতের ফাঁদে শুধু রুশরাই পা দেয়নি। ইউক্রেনীয়রাও সেখানে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় মারা যাচ্ছে।

আমরা যেখানে গিয়েছিলাম তার অবস্থান প্রকাশ করা যাবে না। এখানকার আশেপাশের গ্রামগুলো এখন ধ্বংসের মুখে। অনেক বাড়ির গেটে হাতে লেখা চিহ্ন রয়েছে, বেশিরভাগই রুশ ভাষায়, ‘এখানে সাধারণ মানুষ থাকে।’ এটি যতটা না বিবৃতি তার চেয়েও শত্রুপক্ষের প্রতি এটি একটি আবেদন। গ্রামের রাস্তাগুলি একেবারেই ফাঁকা। শুধু কিছু বেওয়ারিশ কুকুর ধ্বংসপ্রাপ্ত খামার আর ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

পাহাড়ের একপাশে যেখানে একটি কামানের পাশে একদল সৈন্য জড়ো হয়েছে, সেখানে আমি ‘ডর্ফ’কে জিজ্ঞাসা করি: অপেশাদার রুশ সৈন্যদের হাতে এই যে ইউক্রেন প্রতিদিন সৈন্য হারাচ্ছে, তার ফলে ঘিরে থাকা শত্রুর মাঝে এই মৃত শহরকে রক্ষার চেষ্টার আসলেই কোন অর্থ রয়েছে কি?

তার সঙ্গী সৈন্যটি লম্বা দাড়িওয়ালা একজন গাঁট্টাগোট্টা মানুষ, যার কল সাইন ‘হোম’। তিনি ডর্ফের এই কথার সাথে একমত। আমাদের জন্য এটি কোন কৌশলগত প্রশ্ন না। আমরা সাধারণ সৈনিক। তবে এটি আমাদের মাতৃভূমি। আমরা হয়তো পিছু হঠে চাসিভ ইয়ার, এবং চাসিভ ইয়ার থেকে স্লোভিয়ানস্ক পর্যন্ত গেলাম। এবং শেষ পর্যন্ত পিছু হঠে আমরা কিয়েভ পর্যন্তই গেলাম। এর জন্য এক বা দু’বছর, কিংবা চার বা পাঁচ বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু প্রতি ইঞ্চি ভূমির জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এই সৈন্যরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে লড়াই চালাচ্ছে, এবং তারা বলছেন যে রুশ বাহিনীও এখন বদলাতে শুরু করেছে।

তিনি বললেন, ‘আমি নিজেও ভাবছিলাম বাখমুতকে রক্ষা করা আমাদের উচিত কিনা। একদিকে, এখানে এখন যা ঘটছে তা সত্যি ভয়ঙ্কর। বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই। তাহলে বিকল্প হল বাখমুত ছেড়ে আমরা অন্য কোন জায়গায় চলে যেতে পারি। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাখমুত কিংবা অন্য কোন গ্রামকে রক্ষা করার মধ্যে পার্থক্য কী থাকলো?

তারা আমাদের কায়দাকানুন শিখে নিচ্ছে, তারা আরও চতুর হয়ে উঠছে। আর এটি সত্যিই আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে, বলছিলেন ডর্ফ। ধরুন, কারাগার থেকে আনা পাঁচ মূর্খের একটি দলকে তারা সামনে দিকে পাঠায়। আমরা এদের ওপর গুলি চালাই। এটা দেখে তখন শত্রুপক্ষ বুঝতে পারে আমাদের অবস্থান কোথায়। তখন তারা আমাদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায় এবং পেছন থেকে আমাদের ঘিরে ফেলে।

যুদ্ধের আগে ডর্ফ ছিলেন একজন যুবকর্মী। দেশের পশ্চিম প্রান্তে কার্পেথিয়ান পর্বতমালায় তিনি তরুণদের হাইকিং করাতে নিয়ে যেতেন। ইউক্রেনের এই পূর্ব ফ্রন্টে সেগুলো এখন অতীতের ধুসর স্মৃতি। তিনি অনেক লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু বাখমুতের ভয়াবহতার স্মৃতি সারাজীবনের জন্য তার সঙ্গী হয়ে থাকবে।

হোম নামে সৈন্যটি জানালেন, রুশ বাহিনী এখন আরও কার্যকরভাবে গ্রেনেডবাহী ড্রোন ব্যবহার করছে। আগে আমরা গ্রেনেড ছুঁড়ে তাদের পাগল করে দিতাম, বললেন তিনি, এখন তারাই আমাদের অবস্থানের ওপর ড্রোন দিয়ে গ্রেনেড ফেলছে।

আমি যখন ওয়াগনার গ্রুপের সাবেক কারাবন্দী সৈন্যদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, তখন তিনি থমকে গেলেন এবং একটু ভেবে বললেন, সত্যি কথা বলতে কি এটি একটি দারুণ প্ল্যান। এটি খুব নিষ্ঠুর আর অনৈতিক কাজ, কিন্তু তারপরও এটি এক কার্যকর কৌশল। এটি কাজে লেগেছে এবং বাখমুতে এখনও এটি কাজে লাগছে।
যুদ্ধের ময়দান বদলাতে থাকে মুহূর্তে মুহূর্তে। এখন এই ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ঘাঁটি গেড়েছে একটি ছোট বনের মধ্যে। রুশ বাহিনীর গুলিতে গাছগুলি ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে গাছে গাছে যখন নতুন পাতা আসবে তখন এই বন তাদের ঢেকে ফেলবে। এখন পাতাবিহীন গাছের ফাঁক দিয়ে তাদের অবস্থান রুশ ড্রোনের নজরে পড়ে। আশেপাশে গুলি বিনিময় চলছে, এবং প্রায় ৫০০ মিটার দূরে রুশ গোলা আঘাত হানে। কিন্তু ৪৮-বছর বয়সী প্রাক্তন স্থপতি ক্যাপ্টেন বরিস, যিনি এখন অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন, এসব নিয়ে তার মোটেও কোনো দুশ্চিন্তা নেই।

এর বেশ ক’দিন পর, আমি একই এলাকায় ফিরে যাই। আমাদের বাহন ছিল সোভিয়েত জামানার একটি ইউএজেড জিপ। সঙ্গী আরও চারজন। ড্রাইভার ওলেগ কথা বলেন কম। পাহাড়ের ওপর দিয়ে এবং কাদার সাগরের মধ্যে দিয়ে লড়াই করতে করতে গাড়িটি যখন সামনের দিকে এগোয় তখন তিনি তখন শক্ত হাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে থাকেন এবং মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালান। আমরা যখন ২৮তম যান্ত্রিক ব্রিগেডের কাছাকাছি আসি তখনই কানে আসে অটোম্যাটিক বন্দুকের গুলির শব্দ। এই ২৮তম যান্ত্রিক ব্রিগেড রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি লড়াই করছে।

ফেরার পথে ওলেগ জিপটিকে হঠাৎ থামিয়ে দেয়। সামনে কাদার মধ্যে পড়ে ছিল একটি ড্রোন, যেটি তার গন্তব্যপথ থেকে সরে গিয়েছিল। এর ব্যাটারিটি দ্রুত বের করে নেয়া হয় এবং একে গাড়িতে তোলা হয় - এটি ছিল একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন।
এটি তখনই কাজ করে যখন ব্যাপক আক্রমণ চলে ... তখন এটি সত্যিই ভালো কাজ করে, বরিস বলছেন। তাই প্রতি সপ্তাহে আমরা এটি ব্যবহার করি।

এখনকার যুদ্ধ হচ্ছে ড্রোন যুদ্ধ, তিনি বললেন, কিন্তু আজ আমরা একটু ঘুরে বেড়াতে পারছি, কারণ আজ বাতাস রয়েছে আর বৃষ্টি হচ্ছে যার কারণে ড্রোন হাওয়ায় উড়ে যায়। আবহাওয়া যদি আজ শান্ত থাকতো তাহলে ড্রোন আর শত্রু দুটিই আজ আমাদের ওপর দিয়ে ঘোরাফেরা করতো।

কিন্তু এখনকার যুদ্ধ অতীতের যুদ্ধ থেকে খুব একটা আলাদা নয়।
দু’রাত আগে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ২৮তম ব্রিগেড রুশ পদাতিক ও ট্যাঙ্ক আক্রমণের মুখে পড়েছিল। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে মাটিতে খোদাই করা ট্রেঞ্চে, যেখানে ছাদের ভেতর দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা কাদাভরা মেঝেতে পড়ে, সেখান থেকে বাইরে উঁকি দিচ্ছে একটি ম্যাক্সিম মেশিনগান, যা বসানো রয়েছে শক্ত লোহার চাকার ওপর।

আর একুশ শতকের ইউরোপে শীত পেরিয়ে বসন্ত আসার সময়টিতে এভাবেই চলছে বাখমুত রক্ষার লড়াই। ইউক্রেনের কালো কাদামাটির ওপর বসে থাকা উনিশ শতকের মেশিনগানটি অতীতের মতো এখনো ঠিক একইভাবে সৈন্যদের কচুকাটা করছে।

 

এএল/

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ