• ঢাকা বুধবার
    ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে?

প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৩, ০৯:৫৩ পিএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। দু’দফা দিনক্ষণ ঠিক হলেও, রোহিঙ্গাদের অনীহা ও মিয়ানমারের ছলচাতুরীতে প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয়।

শুক্রবার (০৫ মে) সকালে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রাখাইনের ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি’ দেখতে মিয়ানমার গেছে ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল। তবে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি ছলচাতুরী হতে পারে কি না; তা বিবেচনায় নিয়ে সতর্কভাবে এগোনোই সংগত হবে বলে মনে করছেন প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার, যেখানে রয়েছে নিজ ভিটেমাটি। সেই ভিটেমাটির পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে ‘মেহমান হয়ে’ যাচ্ছে টেকনাফ ২৬ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা দম্পতি ইলিয়াছ ও জমিলা। স্বপ্ন তাদের সব অধিকার নিয়ে স্বদেশ মিয়ানমার ফিরে যাওয়া। কিন্তু এর আগেই দিতে হচ্ছে যাচাই-বাছাই পরীক্ষা। তার পরও তারা ফিরতে চান স্বদেশে।

ইলিয়াছ ও জমিলা বলেন, মিয়ানমার প্রতিনিধি গত ১৫ মার্চ টেকনাফ বন্দরে আমাদের যাচাই-বাছাই করেছে। অনেক তথ্য নিয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা মিয়ানমারে নিজ ভিটেমাটি দেখার জন্য টেকনাফ রেস্ট হাউস নিয়ে এসেছে। রাতযাপন পর এখন মিয়ানমার যাচ্ছি, সেখানে নিজেদের ভিটেমাটি ও পরিবেশ পরিস্থিতি দেখার পর সিদ্ধান্ত নেব, স্বদেশে যাব কি না।

তারা আরও বলেন, তবে নিজ দেশে ফেরার খুব আগ্রহ রয়েছে আমাদের। আমরা চাই, অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে মিয়ানমার দ্রুত যাতে আমাদের নিয়ে যায়। বাস্তুচ্যুত এই জীবন আর ভালো লাগে না।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি’ দেখতে শুক্রবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে টেকনাফ জেটিঘাট থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওনা হয় রোহিঙ্গাদের ২০ জন সদস্য। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। মিয়ানমারের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে পুনরায় বিকেলে টেকনাফ ফিরবেন তারা।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি হয়েছে প্রায় ৫ বছর। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এরই মধ্যে গত ৬ বছরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় প্রত্যাবাসনকে রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান বিবেচনায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ যে আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে, সেটি মিয়ানমারের কখনোই ছিল না।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় নিরাপত্তা পরিষদ, আইসিজেসহ আন্তর্জাতিক নানা ফোরাম থেকে মনোযোগ সরাতে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সামনে এনেছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের সদিচ্ছা আছে কি না, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ফলে মিয়ানমার এ মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর যে প্রস্তাবটি দিয়েছে, সেটি ছলচাতুরী হতে পারে কি না, সেটিও বিবেচনায় নিয়ে সতর্কভাবে এগোনোই সংগত হবে।

এর আগে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে গত ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসে মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা প্রত্যবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রিত ৪৮০ জন রোহিঙ্গা তালিকা যাচাই-বাছাই করেন।

 

বিএস/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ