• ঢাকা শুক্রবার
    ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাকা দাও, না হয় বিষ দাও!

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২২, ০৮:০০ পিএম

টাকা দাও, না হয় বিষ দাও!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

টাকা দাও, না হয় বিষ দাও; তোমার চেক ফেরত নাও, আমার টাকা বুঝিয়ে দাও; টাকা দে নয়তো জীবন নে- ব্যানার-ফেষ্টুনে এসব স্লোগান লিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছেন কিছু মানুষ। তারা আর কেউ নন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের প্রতারণায় নিঃস্ব হওয়া গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন তারা। এখন তাদের পথে বসার অপেক্ষা মাত্র। বাংলাদেশ ই-কমার্স কাস্টমারস সোসাইটি (বিইসিএস) আয়োজিত মানববন্ধনে তাই তো তাদের এই আকুতি!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলেশা মার্টের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হন এই গ্রাহকরা। ফলশ্রুতিতে লাভের আশায় নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির হাতে। কেউবা টাকা দেন মোটরসাইকেল কেনার জন্য, কেউবা ফ্রিজ আবার কেউবা অন্যান্য পণ্য।

পরবর্তীতে প্রতিশ্রুত তারিখে পণ্যের ডেলিভারি পান না গ্রাহকরা। এরপর থেকে ঘুরতে থাকেন আলেশা মার্টের অফিসে। সেখান থেকে তারিখের পর তারিখ দেয়া হলেও পাওনা টাকা বা পণ্য কোনেটাই পান না গ্রাহকরা। তখন তারা বুঝতে পারেন বড় ধরনের প্রতারণার খপ্পরে পড়েছেন তারা।

এরপর এক সময় বন্ধ করে দেয়া হয় আলেশা মার্টের অফিস এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম। প্রতারিত গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা। তদন্ত চলছে নিজস্ব গতিতে, কিন্তু অদ্যাবধি কোনো গ্রাহকদের পাওনা টাকার বিষয়ে হয়নি কোনো সমাধান।

মিষ্টভাষী আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম শিকদার মাঝে-মধ্যে ফেসবুক লাইভে এসে নতুন নতুন নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছোটান। তারিখ দেন গ্রাহকদের টাকা ফেরতের। কিন্তু সেই টাকা আর ফেরত পান না ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলেশা মার্টের প্রতারণার বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন গ্রাহকরা। ফারদিন চৌধুরী নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘এখন দিন যাচ্ছে আর সবার চেকের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান জেনে বুঝে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আমরা হয়তো বুঝতেও চেষ্টা করছি না চেয়ারম্যানের প্ল্যান অধিকাংশ গ্রাহকের টাকা মেরে দেয়া। যেহেতু তিনি আর ব্যবসায় ফিরবেন না সেহেতু উনি চাইবেন টাকাগুলো হজম করতে। উনি একটা ব্যাংক লোনের নাটক বানিয়েছিলেন। যেই নাটকের ফোকাসে আমাদের থেকে ৬ মাস অতিরিক্ত সময় নিলেন এবং সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে উনি ফোকাস করলেন যে তিনি লোন পাননি। কিন্ত উনি মে মাসেও বলেছেন আমাদের সব রেডি, জুন ক্লোজিং তাই সব ক্লি ন করতে জুলাইয়ের ৭-১৫ তারিখ লাগবে। কিন্তু জুলাই শুরুর আগেই নাটক শুরু করে দিলো যেমনটি করেছিল জানুয়ারির ৩০ তারিখ নিয়ে। আর এখন লিস্ট দেয়ার কথা থাকলেও উনি কোনো লিস্ট দিবেন না। কেনো দিবেন না সেটা সবার জানা। লিস্ট হয়েছে কিন্তু প্রকাশযোগ্য লিস্ট না। তাই সবাই সচেতন হোন। চেক নিয়ে শুধু শুধু বসে থাকবেন না।’

তাজওয়ান সিয়াম নামে এক গ্রাহক আক্ষেপ প্রকাশ করেন ফেসবুকে, ‘আলেশা গ্রুপের চেয়ারম্যান শতকোটি টাকা মেরে খাওয়া শিকদারের কোন বিচার হয় না। কিন্তু পদ্মা সেতুর একটা নাট খোলায় আদালত ৭ দিনের রিমান্ড দেন- আমরা কোন দেশে থাকি!’

ইবনা তরিকুল নামে এক গ্রাহক লেখেন, ‘সকলে প্রস্তুতি নিন। খুব শীঘ্রই রাজপথে নামতে হবে। এমনিতেই মরার মতো অবস্থা। মরলে নিয়া মরবো।’

আকাশ মাহমুদ নামে এক গ্রাহক লেখেন, ‘চলেন একদিন সবাই একসাথে রাজপথে থাকি। দেখি চেয়ারম্যান কত আমাদের নিয়ে খেলতে পারে।’

মো. কাওসার আলম নামে এক গ্রাহক ফেসবুকে লেখেন, ‘সকল প্রতারক ই-কমার্স কোম্পানি ও মালিকগুলোর বিরুদ্ধে গণআন্দোলন ও দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সাথে সাথে যে সকল অমানুষগুলো দেশত্যাগ করেছে, তাদের জায়গা-জমি বাজেয়াপ্ত করে প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বেশ কিছু মামলায় আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুরুল আলম শিকদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে অজ্ঞাত কারণে গ্রেফতার করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এআরআই

আর্কাইভ