• ঢাকা বুধবার
    ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
আলেশা মার্ট প্রধানের প্রতারণা

তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা ঘুরে বেড়ায় ফেসবুকে, তিনি ঘুরছেন গুলশানে

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০৩:৩৭ এএম

তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা ঘুরে বেড়ায় ফেসবুকে, তিনি ঘুরছেন গুলশানে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

একটি মানুষ, শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা। রয়েছে আরও শত শত অভিযোগ। পরিণত হয়েছেন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে। তার প্রতারণা নিয়ে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবুও তাকে করা হচ্ছে না গ্রেফতার, নেয়া হচ্ছে না আইনের আওতায়। হাজারো গ্রাহককে নিঃস্ব করে তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। আর প্রতারণার শিকার নিঃস্বপ্রায় গ্রাহকদের আর্তনাদ ভাসছে আকাশে-বাতাএরপর।

হায় হায় কোম্পানি ই-কমার্সের নামে চমকপ্রদ ও লোভনীয় বিজ্ঞাপনে হাজারো গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার। কিন্তু সেখানেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। একের পর এক বিছিয়ে যাচ্ছেন প্রতারণার জাল। তার সুনিপুন প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব গ্রাহকরা কেউ কেউ হয়েছেন প্রতিবাদী। নিয়েছেন আইনের আশ্রয়। চেক ডিজঅনারের পর আইনি নোটিশ পাঠিয়ে সাড়া না পেয়ে করেছেন মামলা। এমনকি গ্রাহকদের করা মামলাগুলোয় আলেশা মার্ট প্রধানের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে অসংখ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা। কিন্তু আইনকে নাকের ডগায় রেখে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। আসছেন ফেসবুক লাইভেও। আর এরকম পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মনে জেগেছে প্রশ্ন- অসংখ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও কেনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না তাকে। 

আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে একের পর এক জারি হওয়া পরোয়ানাগুলো সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে , অথচ তিনি ঘুরছেন রাজধানীর গুলশানেই। 

তারা বলছেন, আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধে একের পর এক জারি হওয়া পরোয়ানাগুলো সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে , অথচ তিনি ঘুরছেন রাজধানীর গুলশানেই। 

গ্রাহকদের দাবি, মঞ্জুর আলম শিকদারের সঙ্গে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। আর এই কারণেই পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। 

কথা হয় আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহক ছগীর হোসেনের সঙ্গে। ৮টি বাইক কিনতে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন আলেশা মার্টে। কিন্তু পণ্য ডেলিভারি পাননি তিনি। পরে চেক পেলেও তা ব্যাংক থেকে ডিজঅনার করা হয়। এরপর আইনি নোটিশ পাঠান। এতে কাজ না হলে মামলা করেন। ঢাকা জেলা দায়রা জজ কোর্টে। মামলার অধীনে  জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানাও। কিন্তু গ্রেফতার হননি মঞ্জুর আলম শিকদার গং।

ছগীর বলেন, ‍‍`সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমার করা মামলায় বনানী থানার অধীনে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেখানে আদেশ করা হয় - অক্টোবরের ১১ তারিখ যেনো তাদেরকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। কিন্তু অক্টোবর শেষ হতে চললো কিন্তু কোনো খবর নেই। মঞ্জুর এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঘোষণা দিয়ে লাইভে আসছেন।‍‍`

যারা আইনের রক্ষাকারী,  তারা নির্বিকার। আমাদের মত ভুক্তভোগীদের পাশে না থেকে বিভিন্ন কৌশলে রক্ষা করছেন অপরাধীদের। এভাবে চলতে থাকলে আইনের প্রতি বিশ্বাস থাকবে না আমাদের। - গ্রাহক ছগীর হোসেন

তিনি বলেন, ‍‍`আমার জানা নেই, কেনো তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। বনানী থানাতেও কয়েকবার যোগাযোগ করেছি কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। আমার মত আরো অনেকেই এরকম সমস্যা ফেস করতেছে। কেউ কেউ তো ঋণের চাপায় পড়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ যারা আইনের রক্ষাকারী,  তারা নির্বিকার। আমাদের মত ভুক্তভোগীদের পাশে না থেকে বিভিন্ন কৌশলে রক্ষা করছেন অপরাধীদের। এভাবে চলতে থাকলে আইনের প্রতি বিশ্বাস থাকবে না আমাদের। আমাদের দাবী, মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে আমাদের টাকা ফেরত দেয়া হোক।‍‍`

রাজু শেখ নামক আরেক গ্রাহক জানান, বনানী থানার অধীনে তার করা তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। 

ইভ্যালি প্রধান রাসেল ও এমডি শামীমাকে দ্রুতই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাদিয়াকে কেনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। তবে আশা করছি,  আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শিগিগরই এদের গ্রেফতার করবে।‍‍ - গ্রাহক রাজু

তিনি বলেন, ‍‍`বিষয়টি হতাশা জনক। এতগুলো টাকা বিনিয়োগ করলাম। কিন্তু টাকা কিংবা পণ্য কিছুই পেলাম না। বাধ্য হয়ে মামলা করি। আর মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।‍‍`

রাজু আরও বলেন, ‍‍`ইভ্যালি প্রধান রাসেল ও এমডি শামীমাকে দ্রুতই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মঞ্জুর আলম শিকদার ও তার স্ত্রী সাদিয়াকে কেনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। তবে আশা করছি,  আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শিগিগরই এদের গ্রেফতার করবে।‍‍` 

আমজাদ হোসাইন নামক এক গ্রাহকের করা মামলাতেও হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি। গুলশান থানার অধীনে হওয়া সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ আদৌ ভাবছেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তিনি। 

মনে হচ্ছে সবাই এখন মঞ্জুর আলম শিকদারের হাতের মুঠোয়। না হয় এত দিনে নিশ্চয়ই তিনি গ্রেফতার হতেন।‍‍ - গ্রাহক আমজাদ

তিনি বলেন, ‍‍`মনে হচ্ছে সবাই এখন মঞ্জুর আলম শিকদারের হাতের মুঠোয়। না হয় এত দিনে নিশ্চয়ই তিনি গ্রেফতার হতেন।‍‍`

তিনি আরও বলেন, ‍‍`এই নিয়ে হতাশা ছাড়া আর কিছুই বাকী নেই। আমি অপেক্ষা করছি কবে তাকে আইনের আইনের আওতায় এনে আমাদের টাকাগুলো ফেরত দেয়া হয়।‍‍`

তাওহীদুল ইসলাম নামক এক গ্রাহকও চেক প্রতারণার দায়ে মামলা করেছিলেন মঞ্জুর আলম শিকদার ও সাদিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি জানান, বনানী থানার অধীনে তার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু অন্য সবার মত তার মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার ফাইলেও সম্ভবত ধুলোর আস্তর জমেছে। 

অনান্য প্রতারকদের কিন্তু আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই জনকে কেনো ছাড় দিয়ে রাখা হয়েছে তা রহস্যজনক। - গ্রাহক তাওহীদুল ইসলাম

তিনি বলেন, ‍‍`অনান্য প্রতারকদের কিন্তু আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই জনকে কেনো ছাড় দিয়ে রাখা হয়েছে তা রহস্যজনক।‍‍`

তিনি আরও বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাবে মানুষের। মানুষ তখন আইনকে অবজ্ঞা করে অন্য পন্থা অবলম্বন করবে। তাই তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।‍‍`

সাজ্জাদ হোসেন নামক অন্য একজন গ্রাহকের মামলাতেও হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি। অনেকটা আশাবাদী হয়ে তিনি বলেন, ‍‍`এর শেষ দেখে ছাড়বো। কার ক্ষমতা বেশি, শিকদারের নাকি আইনের?‍‍`
তিনি আরও বলেন, ‍‍`আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের কারণে আমরা আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছি। তারা হয়তো মঞ্জুর আলম শিকদারকে আড়াল করে রাখছেন। তবে আল্লাহর প্রতি ভরসা আছে। কষ্টের টাকা এভাবে ছেড়ে দিব না। এর শেষ দেখে ছাড়বো।‍‍`

ভুক্তভোগী এই গ্রাহকদের মত করে আরও গ্রাহকের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে মঞ্জুর আলম গংদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। গ্রাহকদের দাবী এই প্রতারকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। একই সঙ্গে তাদের প্রাপ্ত টাকা ফেরত দেয়া হোক।

এআরআই

আর্কাইভ