• ঢাকা শুক্রবার
    ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

চিনির দাম সমন্বয়ের পরও সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা

প্রকাশিত: মে ১২, ২০২৩, ০৬:৩৬ পিএম

চিনির দাম সমন্বয়ের পরও সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

১৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি চিনি খোলা বাজারে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না। বাজারে খোলা চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনি বাজারে খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিযোগিতা না থাকলে শুধু দাম বেঁধে দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায় না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লাভবান হতে চান। ফলে ভোক্তা ন্যায্য দাম না পেয়ে প্রতারিত হয়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্য-বিশ্লেষণ এমন চিত্র উঠে আসছে।

এদিকে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মে মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনির দাম ছিল ৪২০ মার্কিন ডলার। আর চলতি মে মাসে দাম বেড়ে হয়েছে ৫৮০ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে ১৬০ ডলার। সেই হিসাবে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

আর সরকারের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। গত বছরের এই সময়ে খোলা চিনির কেজি ছিল ৮০ টাকা। এই হিসাবে এক বছরে দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের মূল্য সঠিক হতে হলেও সরকারের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কতটা কার্যকর, তা বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়া বাজার প্রতিযোগিতমূলক না হলে শুধু দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

তিনি বলেন, অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। এ জন্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে—এমন ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে তবে ভোক্তারা সুবিধা পাবে।

চিনি পরিশোধনকারী দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, বাংলাদেশের কোটা ফুরিয়ে যাওয়ায় গত এপ্রিল মাস থেকে ভারত চিনি রপ্তানি বন্ধ করেছে। ব্রাজিলে ফসল ওঠেনি। এর ফলে বিশ্ববাজারে চিনির দর বাড়ছে। বিশ্ববাজারে চিনির এমন অস্থির সময়ে ১৫ দিন পর পর দর সমন্বয় করা না হলে আমদানিকারকরা অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিরুৎসাহিত হবে। এ জন্য ১৫ দিন পর পর দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

চিনির দাম ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে গত ৮ মে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেদন তৈরিতে কমিশন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন আবেদন অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি এবং এপ্রিল মাসে ঋণপত্র (এলসি) খোলা, ইনবন্ড ও আউট বন্ড মূল্য এবং অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় ডলারের বিনিময় হার (ইনবন্ড ও এক্স বন্ড) ১১১ টাকা ধরা হয়েছে।

এতে অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে দেখানো হয়েছে, গত বছর মে মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চিনির দর ছিল ৪২০ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের এই সময়ে ৫৮০ ডলার। অর্থাৎ গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দর বেড়েছে ১৬০ ডলার। এ ছাড়া গত বছর এ সময় ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯০ টাকা। আর বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার ১১০ থেকে ১১২ টাকা। আবার পণ্য পরিবহন না বাড়লেও ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এর ফলে স্থানীয় বাজারে চিনির দর বেড়েছে।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে এবং দেশে ডলারের বিনিময়মূল্য ১১৫ টাকা উল্লেখ করে চিনির দাম বাড়ানোর জন্য গত ১৭ এপ্রিল কমিশনে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ১২৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩৫ টাকা প্রস্তাব করে মিল মালিকদের এই সংগঠন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সরকার বাজারে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিতে শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচ দফায় চিনির দাম বেঁধে দেওয়া হলেও একবারও চিনির সরকারি মূল্য কার্যকর করা হয়নি। সর্বশেষে সরকার গত ৬ এপ্রিল প্রতি কেজি চিনির দাম তিন টাকা কমায়। এতে সরকার ঘোষিত পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল কেজিতে ১০৪ টাকা আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৯ টাকা।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ