• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

৬০ হাজার টাকা দিয়েও আশ্রয়ণের ঘরবঞ্চিত আলিয়ারা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম

৬০ হাজার টাকা দিয়েও আশ্রয়ণের ঘরবঞ্চিত আলিয়ারা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

মোর গরুলাও গেল, বাড়িও গেল। মোর আর থাকার কোনো জায়গা নাই।এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে এসে প্রলাপ গাইতে থাকেন আলিয়ারা। মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিক খুঁজতে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে এসে ইউএনও তার শ্যালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সেই নারী।

এলাকাবাসীর তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় মহিলা আলিয়ারা (২৫) নিজের দুটি গুরুই ছিল তার সম্বল। তবে তিনি চাচ্ছিলেন মাথা গোঁজার একটি নিশ্চিত ঠিকানা। সেই আশাতেই নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করেন তিনি। গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা ইউএনওর শ্যালককে দিয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ওঠেন। তবে ওঠার মাস পর তাকে বের করে দেওয়া হয়।

আলিয়ারা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, হরিপুরের জীবনপুর কুশলগাঁও এলাকার ইয়াসিন আলীর মেয়ে আলিয়ারা খাতুন প্রায় দুই বছর আগে সন্তান নিয়ে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে দুলাভাই নঈমউদ্দীনের সরকারি খাস জমিতে নির্মিত বসতবাড়ির আশ্রয় গ্রহণ করেন। ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে জানার পর আলিয়ারা তদবির শুরু করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের তদারককারী তরিকুল উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মানিকের কথামতো তিনি নিজের গাভী বিক্রি করে ইউএনওর শ্যালক তানভীর হাসানকে সরাসরি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন।

পরে তারা আলিয়ারাকে তারবাগান এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের নম্বর ঘরটির দখল বুঝিয়ে দেন। সেই ঘরে তিনি প্রায় চার মাস ধরে সন্তানসহ বসবাস করছিলেন। পরবর্তীতে তরিকুল মানিক আলিয়ারার কাছে পুনরায় ২০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দেবেন বলে হুমকি দেন। টাকা দিতে না পারায় তারা আলিয়ারাকে গত সেপ্টেম্বর ঘর থেকে বের করে দেন।

এসব বিষয়ে আলিয়ারা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবরে সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ করেন। সেটি জানার পর ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম তাকে কৌশলে কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে ইউএনও আলিয়ারাকে পুলিশ তার কার্যালয়ের কর্মচারী দ্বারা মানসিক শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং হুমকি দেন, তাদের মতো করে জবানবন্দি না দিলে বড় ধরনের ক্ষতি করবেন। সে সময় জোরপূর্বক আলিয়ারার কাছে তাদের মতো করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেন এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে সামাজিক রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিকদের কাছে সাহায্য চান আলিয়ারা।

ইউএনওর শ্যালক তানভীর হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল করিম বলেন, সেই মহিলা অনেক খারাপ মিথ্যে কথা বলে। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আমার পা জড়িয়ে ধরলে আমার লোকেরা তাকে টেনে সরিয়ে দিয়েছে। আর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। সে যদি টাকা দিয়ে থাকে তাহলে এই দায় তার নিজের। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টির খোঁজ নেব।

সবুজ/এম. জামান

আর্কাইভ