• ঢাকা শুক্রবার
    ০১ নভেম্বর, ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

কুমিল্লায় মৃত মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের চেষ্টা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২২, ০৬:১৬ পিএম

কুমিল্লায় মৃত মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের চেষ্টা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণপাড়ার  চন্ডিপুর গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ ভূইয়ার  স্ত্রী পলাশী আক্তার ও তার সন্তানদের ওপর  হামলা ও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ করা হয়েছে তার দেবর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী পলাশী আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার শ্বশুর মৃত মাজেদুল হক ভুইয়ার তিন ছেলের মধ্যে মেজ ছেলে আমার স্বামী  মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ ভুইয়া দীর্ঘ দিন ধরে নানী মাহমুদা খাতুনের সেবা যত্ন করেছেন। এ কারণে নানী সন্তুষ্ট হয়ে মৃত্যুর আগে ১৯৯১ সালে ২১২ শতক জমি দানপত্র করে দেন আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ ভূঁইয়াকে। তিনি বলেন, নানী শাশুড়ি ও ফারুক আহমেদ ভুইয়া জীবিত থাকাবস্থায় এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি।

এরই মধ্যে ফারুক আহমেদের নানী মারা যান এবং ২০০৮ সালে ফারুক আহমেদ ভুইয়াও মারা যান। এরপর ফারুক আহমেদের বড় ভাই জাহাঙ্গীর ভুইয়া ও ছোট ভাই মিজানুর রহমান ভুইয়া ওই সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা  শুরু করেন। মিজানুর রহমান গং ভুয়া বিএস খতিয়ান করে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে নানীর দানকৃত বেশির ভাগ সম্পত্তিই নিজের দখলে নেন। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পলাশী আক্তার বলেন, আর এস এবং দলিল মূলে আমার নানী শাশুড়ি আমার স্বামীকে তার সম্পত্তি দানপত্র করে গেছেন। অন্যায়ভাবে আমাদের সম্পত্তি দখল করার প্রতিবাদে আমরা সামাজিকভাবে বিচার চাইলে আমাদের মালপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় আমাদের উভয় পক্ষের মধ্যে একটি আপোষনামা করে দেন।

কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে আমার দেবর মিজানুর রহমান ভুইয়া এই আপোষনামার অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আবারো আমাদের নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। ইতোমধ্যে আমার ও আমার ছেলেদের নামে দেওয়ানী মামলাসহ ৪/৫টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করেছেন এবং বেশ কয়েকবার আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার ছেলেদের আহত করেছেন।

পলাশী আক্তার আরও বলেন, গত ৯ নভেম্বর রাত ৮টায় আমার দেবর মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, ছেলে সিফাত জাহান তুহিন, দা, ছেনী, লোহার রড, লাঠি সোটা নিয়ে আমার বাড়ির উঠানে এসে আমার ছোট ছেলে রাফিকে বেধরক মেরে  আহত করে। এ সময় তারা আমার ছেলের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, নগদ টাকা এবং আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পরে যখম অবস্থায় আমার ছেলেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি। দেবর মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ছেলেদের অত্যাহার নির্যাতনে আজ আমরা দিশেহারা এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

পলাশী আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার স্বামী ১৯৭১ সালে  দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। এবং এই দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। আজ সেই স্বাধীন দেশে তারই স্ত্রী হয়ে সন্তানদের নিয়ে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি, স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে মিজানুর রহমান গংদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। এ সময় পলাশী আক্তারের দুই ছেলে মো. আল আমিন ভুইয়া ও নাফিজ আহমেদ রাফি উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গত ৯ নভেম্বর আবারো তারা বাড়িতে এসে  হামলা করার অভিযোগ এনে গত ১৪ নভেম্বর ৩ জনকে আসামি করে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ২নং আমলী আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলা করেছেন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের মেজ ছেলে মো. আল আমিন ভুইয়া।

মামলার আসামিরা হলেন, সিফাত জাহান তুহিন (২৫) পিতা মো. মিজানুর রহমান, মোসা: নুরুন্নাহার বেগম (৫০) স্বামী মো. মিজানুর রহমান এবং মিজানুর রহমান (৫৫) পিতা মৃত মাজেদুল হক ভুইয়া।

 

এসএই/এএল

 

আর্কাইভ