 
              প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম
 
                 
                            
              গ্রাহকদের প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে প্রিমিয়ার ইসলামী সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেড এনজিও পরিচালক এবং সাতক্ষীরা মাছখোলা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরার মায়েরবাড়ী মন্দিরের পাশবর্তী একটি বাড়ীতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এ সময় তার স্বামী এনজিও ম্যানেজার কামরুল ইসলাম আগেভাগেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে পুরাতন সাতক্ষীরার আনসার ভিডিপি ক্যাম্পের উত্তরপাশে অবস্থিত বিলাসবহুল বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
এনজিওটি’র কর্মী দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার খেজুরবাড়ীয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের কন্যা রীনা পারভীনের সাতক্ষীরা থানায় দায়ের করা মামলায় ওই এনজিও পরিচালক আরিফা খাতুনকে গ্রেফতার করে। যার মামলা নম্বর-৪০।
মামলায় স্কুল শিক্ষিকা এনজিও পরিচালক আরিফা খাতুনকে প্রধান করে ও তার স্বামী এনজিও ম্যানেজার কামরুল ইসলামকে আসামী করা হয়েছে। তাদের স্থায়ী ঠিকানা আশাশুনি উপজেলার কাকবাসিয়া গ্রামে। কামরুল ইসলামের পিতার নাম আবুল হোসেন।
মাছখোলা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফা খাতুন তারা স্বামী কামরুল ইসলাম যোগসাজস করে স্ত্রী আরিফা খাতুন স্কুল শিক্ষিকা হওয়া সত্বেও নিয়মবহির্ভূত ভাবে জেলা সাতক্ষীরা সমবায় অফিস থেকে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ২০১১ সালে প্রিমিয়ার ইসলামী সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি লিঃ এর নামে এনজিওর রেজিষ্টেশন বাগিয়ে নেন। যার রেজিস্টেশন নং-২৭।
এনজিওর লাইন্সেস পেয়েই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতা-কর্মীদের ছত্র ছায়ায় থেকে ঋন ও লোন দেওয়া এবং ডিপিএস এর দুই থেকে তিনগুন টাকা দেওয়ার কথা বলে মাঠ পর্যায় থেকে প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকদের নিকট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাত করেন এনজিওটি’র পরিচালক স্কুল শিক্ষিকা আরিফা খাতুন ও তার স্বামী ম্যানেজার কামরুল ইসলাম। এরপর থেকে আরিফা খাতুন ও তার স্বামী কামরুল ইসলামকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এক সময় যে সংসারে তাদের নুন আনতে পন্তা ফুরাত তারা এখন সাতক্ষীরা শহরের বিলাস বহুল বাড়ী, গাড়ীসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ব্যাংক একাউন্টেও রয়েছে কোটি টাকা।
মামলার নথিসুত্রে ও ভূক্তভোগী এবং থানা পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে জানাজায়, দেবহাটা উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া পারুলিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের কন্যা রীনা পারভীন এনজিওটিতে ২০১২ সালে মাঠ পর্যায়ে কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। এর পর ওই এনজিও পরিচালক আরিফা খাতুন ও তার স্বামী ম্যানেজার কামরুল ইসলাম তার মাধ্যমে এনজিওর ডিপিএস এর মাধ্যমে তার দুই বোন পুলিশ সদস্য রত্না খাতুন ও ঝর্ণা খাতুন এবং হেনা খাতুন, রেজওয়ানা খাতুন, ইউসুপ আলী, আমেনা খাতুন, রেশমা খাতুন, ইমরান ও রফিকুল ইসলাম গংদের নিকট থেকে ৬৪টি বই এর মাধ্যমে ৩৪ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা গ্রহন করেন। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ডিপিএস এর মেয়াদ পূর্ন হলেও তাদের নায্য পাওনা টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে বিগত আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্র ছায়ায় থেকে ভয়ভিতি দেখিয়ে আসছিল। দিনের পর দিন দিন গ্রাহকরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে টাকা না পেয়ে ক্ষুব্দহন। এনিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় কয়েক দফায় বসাবসি হয়। এক পর্যায়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রাহকদের পাওনা টাকা দিতে স্বীকার হয়ে তারা গ্রাহকের টাকা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। এক পর্যায়ে বহু হয়রানি ও লাঞ্জনার স্বীকার হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা রীনা পারভীন বাদি হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার এস আই মহাসিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে এনজিও পরিচালক স্কুল শিক্ষিকা আরিফা খাতুন (৪০)কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার এস আই মহাসিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের নিকট থেকে সঞ্চয় ও জমাদেওয়া ডিপিএস এর প্রায় তিন কোটি টাকা এনজিও পরিচালক আরিফা খাতুন ও তার স্বামী ম্যানেজার কামরুল ইসলাম আত্মসাত করেছে। এনজিও কর্মী ও ওই এনজিওর গ্রাহক রীনা পারভীনের দেওয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তকরা হয়। উভয় পক্ষকে নিয়ে থানাতে বসাবসি হলে তারা মামলাটি গ্রহন না করার অনুরোধ জানিয়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিবেন বলে জানান। পরবর্তীতে তারা গ্রাহকের টাকা না দিয়ে বাদি পক্ষকে হমকি-ধামকি ও লাঞ্চিত করে স্বামী-স্ত্রী আত্মগোপনে চলে যান। এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড হলে অভিযান চালিয়ে দুপুরে একটি বাড়ী থেকে এনজিও পরিচালকে আরিফা খাতুনকে আটক করা হয়।
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      