
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
ফরিদপুরের মধুখালীতে রাজন হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া মামলার প্রমান লোপাটের দায়ে ওই পাঁচ জনকে আরো ৭ বছর করে কারাদন্ড এবং একই সাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালতের বিচারক।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে এ আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত।
রায় ঘোষনার সময় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত মো: আরমান হোসেন, মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন, মো: মামুন শেখ ও ইলিয়াছ মৃধা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত অপর আসামী আছাদ শেখ পলাতক রয়েছেন। পরে পুলিশ পাহারায় আদালত থেকে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এদের সকলেরই বাড়ী জেলার মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
এছাড়া মামলার অন্য আসামী মো: হাসান সিকদার ও মো: আশরাফুল শিকদার-দ্বয়কে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক খালাস প্রদান করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহ মো: রাজন (২৮) বিকালে তার মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে থাকে। নিখোঁজের চার দিন পর রাজনের ব্যবহৃত পালসার মোটরসাইকেলটি মধুখালী উপজেলার তারাপুর শ্মশানঘাট সংলগ্ন মধুমতি নদীর পানিতে জেলেরা মাছ ধরার সময় পায়। পরে পুলিশ মামুনের বাড়ীতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বসতঘর তল্লাশী করে মামুনের ব্যবহৃত প্যান্টের পকেটে রাজনের ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি পেয়ে কললিস্টের সূত্র ধরে আরমান হোসেনকে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরমান স্বীকার করে রাজনকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মামুনের সহায়তায় কৌশলে কুড়ানিয়ার চর এলাকায় একটি বাগানে ডেকে নিয়ে গিয়ে আছাদ ও মামুন শেখ সহ অজ্ঞাত ৫/৬ জন ধারালো অস্ত্র দিয়া কুপিয়ে হত্যা করে লাশ উক্ত বাগানের মাটির নীচে চাপা দিয়া রাখে। পরে পুলিশ মাটি খুড়ে রাজনের লাশ উত্তোলন করে।
হত্যাকান্ডে মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন সহ অন্যরা লাশ ময়না তদন্তে বাঁধা দেওয়া, বিবিধ নেতিবাচক কর্মকান্ড ও পারিপার্শ্বিকতায় হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমান পায় পুলিশ। এঘটনায় নিহত রাজনের মা জোৎন্সা বেগম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে পুলিশ। দীর্ঘ সাক্ষী ও শুনানী শেষে আজ মামলার রায় ঘোষনা করেন আদালতের বিচারক।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো: রকিবুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, রাজনকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা হয়। পরে পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনে। এঘটনায় রাজনের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ সাক্ষী ও শুনানি শেষে আজ আদালতের বিচারক রাজন হত্যা মামলায় ৫জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন। এর মধ্যে একজন পলাতক রয়েছে। অন্যরা আদালতে হাজির ছিলেন। একই সাথে প্রত্যেককে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড অনাদায়ে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।
তিনি আরো জানান, মামলার প্রমান লোপাটের দায়ে ওই পাঁচ জনকে আরো ৭ বছর করে কারাদন্ড এবং একই সাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন আদালতের বিচারক।