প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৮:২৮ পিএম
পঞ্চগড়ে ছাত্রদল কর্মী জাবেদ উমর জয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পঞ্চগড় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন ঝুনু (২৪) কে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা শহরের কায়েতপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে আটক করা হয়। তবে এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোন মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড় পৌর সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মাহাফুজার রহমান রতন ইসমাইল হোসেন ঝুনুর রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, ঝুনু ৬ নম্বর ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব। তাকে আমরা ২০২২ সালে বহিস্কার করেছি। তার বাসা রাজনগড় নতুনবস্তি এলাকায়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকালে জয়ের মরদেহ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ২ টা ৫০ মিনিটে পঞ্চগড় পৌর জানাজা ঘরে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পৌর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত জয় পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য। সে ওই এলাকার জহিরুল হকের ছেলে। জয় পঞ্চগড় ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার কলেজিয়েট ইন্সটিটিউট থেকে চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি জেলা শহরের কদমতলা এলাকায় সূচনা ফল ঘরে ম্যানেজারের দ্বায়িত্বে ছিল।
এদিকে, জাবেদ উমর জয়কে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে সহপাঠী, পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন বিপিয়ান সদস্যরা অংশ নেন। বৃৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় যান শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চৌরঙ্গী মোড় এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এসময় উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই সহ নানা শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় সড়ক অবরোধে পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়কের দুইপাশে শতাধিক যানবাহন আটকে পরে। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, জয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা বিপিয়ানরা এই হত্যাকাণ্ডে বিচার চাই। জড়িতদের দ্রুত প্রেপ্তার করা হোক। সেই সাথে গত কয়েকদিনে হত্যাকাণ্ডের যারা শিকার হয়েছেন তাদের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হোক।
পরে ঘটনাস্থলে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শইমী ইমতিয়াজ, সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান সহ পুলিশের কর্মকর্তারা ছুঁটে যান। পরে তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জানান, এঘটনায় ঝুনু নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকী আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে শিক্ষার্থীদের আশস্ত করলে তারা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। পরে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন শিক্ষার্থীরা। পরে বিচার ও হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জড়িতদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আশস্ত করেন। পরে সেখান থেকে চলে যান তারা।
নিহত জাবেদ উমর জয়ের বড় ভাই আশরাফ আলী বলেন, আমার ভাইকে যখন হত্যা করা হয় তখন সেখানে ঝুনু, আল আমিনেরা ছিল। আমি বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করবো। আমার ভাইয়ের খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শইমী ইমতিয়াজ বলেন, জয় হত্যাকাণ্ডে ঝুনু নামে একজনকে জেলা শহরের কায়েতপাড়া এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। এখনো কোন মামলা হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে, বুধবার রাতে জেলা শহরের সিনেমা হল মার্কেট এলাকায় পঞ্চগড় পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সদস্য জাবেদ উমর জয়কে পূর্ব শত্রুতার জেরে ছুরিকাঘাত করেন ছাত্রদল কর্মী ফারাজ ইসলাম আল আমিন। পরে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।
