
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম
অভিযুক্ত যুবদল নেতা আব্দুস সালাম। ছবি: সংগৃহীত।
দশ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাবনায় এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর বাড়িতে অতর্কিত হামলা ও গুলির অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুই বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধ ও একজন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গুলিবিদ্ধরা হলেন, ইউনিয়নের চোকদারপাড়া গ্রামের রজব আলী শেখের ছেলে ও চরতারাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ শফি (৪৫), দাসপাড়া গ্রামের মনতাজ আলী খানের ছেলে বিএনপি নেতা টিক্কা খান (৪৭)। আহত ব্যক্তি হলেন, দাসপাড়া গ্রামের মৃত খবির উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে আবুল কাশেম বিশ্বাস (৫০)। তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী বলে জানা গেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, চরতারাপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের হকেন প্রামানিকের ছেলে ও চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিক ও তার দুই সহযোগী একইগ্রামের সাহের মোল্লার ছেলে তনসের মোল্লা, মজিবর বিশ্বাসের ছেলে শামীম বিশ্বাস।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে কাশেম বিশ্বাস, শেখ শফি, টিক্কা খান সহ কয়েকজন বসে কথা বলছিলেন। এমন সময় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিকের নেতৃত্ব কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তারা বাড়ির গরুর ঘরের পিছন থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এরপর স্কুলের সামনে এসে আবারো গুলি করেন। এসময় বিএনপি নেতা শেখ শফি গুলিবিদ্ধ হন। এর প্রায় আধাঘন্টা পর ঘটনাস্থল থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে বিএনপি নেতা টিক্কা খান কে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ শফির অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তার করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মালয়েশিয়া প্রবাসী আবুল কাশেম বিশ্বাস বলেন, ‘১৭ বছর ধরে আমি মালয়েশিয়াতে থাকি। আমরাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুবদলের সালাম প্রামানিক প্রায়ই চাঁদার দাবিতে আমার বাড়িতে এসে হুমকি দিতো। আমি চলতি মাসের ৫ তারিখে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসি। আসার পর যুবদলের এসব নেতারা আবারো দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বলি যে আমিও তো বিএনপি করি তাহলে বিএনপি করে বিএনপিকে চাঁদা দিতে হবে কেন। এসব আবদার পুরণ না করায় আমার বাড়িতে এসে অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমার সঙ্গে বসে থাকা দু’জনকে গুলি করে। এময় আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই চক্রটি সালিশী বাণিজ্য, অবৈধ বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি সহ এলাকায় নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেন তিনি।’
অভিযুক্ত চরতারাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রামানিক বলেন, ‘আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এখানের কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনা জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মনির হোসেন বলেন, ‘ঘটনা আমরা জানতে পেরেছি। প্রকৃত তদন্ত হবে। তদন্তে যদি অভিযুক্তেদের বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোপুর্বেও আমরা যত অভিযোগ পেয়েছি, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, ‘প্রবাসে থাকা অবস্থায় আবুল কাশেম যুবদল নেতা সালামদের বালুর ব্যবসা নিয়ে লেখালেখি করতেন। বিদেশ থেকে বাড়ি আসার পর আবুল কাশেমের সঙ্গে শেখ শফি ও টিক্কাকে মিশতে নিষেধ করেছিলেন সালাম। এর জের ধরে ইউনিয়ন যুবদল নেতার নেতৃত্ব গুলির ঘটনা ঘটে। দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। শর্টগানের গুলির দুটি খোসা পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত মামলা হয়নি।’