• ঢাকা সোমবার
    ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
‘ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা’

শিশু হাফসা হত্যার ঘটনায় মামলা, আটক আরো ১; স্থানীয়দের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম

শিশু হাফসা হত্যার ঘটনায় মামলা, আটক আরো ১; স্থানীয়দের বিক্ষোভ

শিশু হাফসা হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন স্বজন এলাকাবাসী। সোমবার দুপুরে পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কে।

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আরো একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলায় অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হলো। শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসা’র মা রিতু খাতুন বাদি হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয় সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

সঞ্জয় কুমার সাহা আরো জানান, এ ঘটনায় অভিযুক্ত পান্না সরদার (২৮) নামে আরো একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হলো। এর আগে ঘটনার দিন রাতেই সাব্বির ও রমজান নামের দুইজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে  রোববার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা জড়িত সকল আসামিকে গ্রেপ্তারে থানা পুলিশকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন। তা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারি দেয়। এ সময় প্রায় এক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখানো হাফসা’র মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, ‘মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসকও জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।’

আর্কাইভ