• ঢাকা শনিবার
    ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট বাওয়াছড়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২২, ০৫:০৩ এএম

চট্টগ্রামের মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট বাওয়াছড়া

চট্টগ্রাম ব্যুরো

দূর থেকে শোনা যায় ঝরনার নুপুরধ্বনি। অতিথি পাখিদের কলতান, পাহাড়ি সবুজ গাছের সমারোহ একসঙ্গে উপভোগ করতে চাইলে ঘুরে আসুন বাওয়াছড়া কৃত্রিম লেক থেকে। শুধু লেক নয়, হরিনমারা নামে একটি ঝরনাও আছে সেখানে। উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট এটি।

এ যেন সৌন্দর্যের সঙ্গে অপরূপ সৌন্দর্যের মিতালী! পাহাড়ি ঝরনার মুখে বাঁধ, পাহাড়িয়া সবুজ গাছের সমারোহ। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ মুগ্ধ হবেন বাওয়াছড়া দেখে। এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে পর্যটকদের। মিরসরাই উপজেলার ১৫নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে এটি অবস্থিত।

অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য, দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়, ঝরনা এসব দেখে মুগ্ধ হতে হবেই! মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অঝোরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারো মনে নাড়া দেবে। যেন একটু ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে যাই! লেকে ছোট্ট একটি নৌকা আছে, সেই নৌকায় লেকে মনের আনন্দের ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা।

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় লেকের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান করেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে এর অবস্থান। সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে বারমাসি ছড়ার মুখে তাই লেকটির নামকরণ করা হয়েছে বাওয়াছড়া লেক। এর মধ্যে সামান্য পথ ছাড়া বাকি পথ গাড়িতে যাওয়া যায়।

টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। স্থানীয় লোকদের বাড়ি ও ক্ষেতের আইলের পাশে বেড়ে উঠেছে বিভিন্ন শাক-সবজির সমাহার। কিছুণের মধ্যেই পর্যটকেরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল!

যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। চলার পথে শোনা যায় হরিণের ডাক। অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সঙ্গে। এই লেকের ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। নীল আকাশের বিশালতার নিচে সবুজের সমারোহ। এ যেন প্রকৃতির লীলাখেলা।

ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী নামজুল ইসলাম রাকিব জানান, আমি এখানে প্রথমবার এসেছি। অনেক সুন্দর জায়গা। তবে এখনো পর্যটন অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। সরকার একটু নজর দিলেই এটি হবে চট্টগ্রামের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। এ ছাড়া এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জরুরি।

রাতে তাবু টাঙিয়ে রাত কাটানো কলেজ ছাত্র আকবর হোসেন বলেন, ‘বাওয়াছড়ায় দিনের বেলায় অনেকবার এসেছি। গত কয়েকদিন আগে বন্ধুরা মিলে এখানে ক্যাম্প করে রাত কাটিয়েছি। এক কথায় অসাধারণ। সারা রাত লেকের পাড়ে হুই হুল্লোড়, খাওয়া-ধাওয়া, বারবিকিউ অনেক আনন্দ হয়েছে।’

চট্টগ্রাম শহর থেকে আসা পর্যটক ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘বাওয়াছড়া অনেক সুন্দর জায়গা। এ প্রকল্পকে ইকো ট্যুরিজমের আওতায় এনে যদি উন্নয়নমূলক কাজগুলো হাতে নেয় তাহলে ভবিষ্যতে এটি সম্ভাবনাময় একটি জায়গা হবে।’

‘বিস্তীর্ণ পাহাড় এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে কেউ যদি বাস্তবে না আসে তাহলে বুঝতে পারবে না যে এই জায়গাটা কতটুকু সুন্দর। সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আরও পর্যটক আসবে।’

কীভাবে যাবেন? দেশের যে কোনো জায়গা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ছোট কমলদহ বাজারের দক্ষিণ পাশে নেমে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে প্রকল্পের অবস্থান।সড়কের মূল প্রবেশ মুখে প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। যে কোনো ছোট গাড়ি নিয়ে প্রকল্প পর্যন্ত যাওয়া যাবে।

থাকা-খাওয়ালেকের ২শ গজের মধ্যে আছে ‘বাওয়াছড়া লেক রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট’। সেখানে একসঙ্গে ১০ জন থেকে শুরু করে ৩০০ জন একসঙ্গে খেতে পারবেন। এ ছাড়া কমলদহ বাজারে রয়েছে বিখ্যাত ‘ড্রাইভার’ হোটেল।

এই হোটেলের খাবার উত্তর চট্টগ্রামে খুব জনপ্রিয়। তবে এখানে থাকার ব্যবস্থা না থাকলেও প্রকল্প এলাকা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের এ কে খান মোড় ও অলংকারে থাকার জন্য আছে মায়ামী রিসোর্ট ও রোজভিও।

 

এবি/এএল

আর্কাইভ