• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রাচীন নগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২, ১০:১৯ পিএম

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

প্রাচীন নগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান মহাস্থানগড়

ফিচার ডেস্ক

প্রাচীন নগরী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা হয়। 

প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল।

 প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। 

২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা হয়।

আরও পড়ুনঃ সংঘাত নয়, আমরা সমঝোতায় বিশ্বাসী: প্রধানমন্ত্রী


প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে বগুড়া রংপুর মহাসড়কের পাশে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷


এখানে শায়িত আছেন হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রহঃ)। আছে তাহার স্মৃতি বিজড়িত মাজার ও মসজিদ, আসে হাজার হাজার মাজার জিয়ারতকারী ও ভক্ত-আশেকান, এ পটভূমিতে অবস্থিত প্রত্মতাত্ত্বিক যাদুঘর, বহুল আলোচিত বেহুলার বাসরঘর, ভাসুবিহার, হিন্দু সম্পদায়ের তীর্থস্থান শিলাদেবীর ঘাট, রয়েছে জীবন্তকুপ যে কুপে মৃত্যূ মানুষ ফেলে দিলে জীবিত হত বলে প্রবাদ রয়েছে। মহাস্থানগড়ের পশ্চিম দিকে কালীদহ সাগর, এ সাগরকে কেন্দ্র করে পদ্মাদেবীর ইতিহাস রচনা করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে নানা নিদর্শন। এ নিদর্শন গুলো দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে আসে হাজার হাজার দর্শনার্থী।

মহাস্থানগড় কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

প্রাচীন সভ্যতার মূল পটভূমি এই মহাস্থান নগরী, যাকে বলা হয় পূন্ড্রবর্ধন বা পূণ্ড্রনগরী। এ পুণ্ড্রনগরী প্রাচীন বাংলা রাজধানী ছিল। এখানে অনেক রাজা রাজত্ব করেছেন। এখানে ৬৫০ খ্রীঃ থেকে ১২০৫ খ্রীঃ পর্যন্ত ৮ রাজ পরিবার রাজত্ব করেছেন। হিন্দু শাসক রাজা পশুরামের ১১৮০-১২০০ খ্রীঃ মধ্যে আগমন ঘটে। তার পর একজন মুসলিম ধর্মযাজকের আগমন ঘটে তিনি আসেন সুদুর বল্লখ শহর থেকে মাছের পিঠে সওয়ার হয়ে। তৎকালীন রাজা পরশুরাম এর অন্যয় অবিচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে যুদ্ধ ঘোষনা করে এ পটভূমিকে মুক্ত করে ইসলামের ঝান্ডা উড্ডয়ন করেন। সেই থেকে এই নগরীতে ইসলামের পতাকা পতপত করে উড়ছে। প্রাচীনকাল থেকে এই পটভূমিকে মহাস্থনগড় নামে আখ্যায়িত করা হয়। মুরব্বীদের মুখে শোনা যায় মহাস্থান গড়ে সারা বিশ্বের আড়াই দিনের খাবার রয়েছে। বর্তমানে মহাস্থান গড়কে উত্তর বঙ্গের গেটওয়ে বলা হয়। ঐতিহাসিক নিদর্শন ছাড়াও বর্তমানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম মসলা গবেষনা কেন্দ্র অসংখ্য সরকারি/বেসরকারি নানামুখি প্রতিষ্ঠান। 

আরও পড়ুনঃ সংবাদের জন্য ফেসবুক-গুগলকে গুনতে হতে পারে টাকা


মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। কথিত আছে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। তিনি পুত্রের জন্য মানত হিসেবে গরু কোরবানী দেন। এই অপরাধে রাজা পরশুরাম তাকে বলির দেওয়ার জন্য আদেশ দেন। এসময় তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারের আগমন ঘটে। কালীদহ সাগর গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। শীলাদেবীর ঘাট গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী। এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে। 

Shohel RS (@ShohelRS2) / Twitter

জিউৎকুন্ড এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
 

মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

আরও পড়ুনঃ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে শুল্ক সুবিধা চায় বাংলাদেশ

 

মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে। বেহুলার বাসর ঘর মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা।এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।

মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। ১৯২৮-২৯ সালে খনন করে গোবিন্দ ভিটায় দূর্গ প্রাসাদ এলাকার বাইরে উত্তর দিকে অবস্থিত। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ এ দুর্গ নগরীর আশপাশে খনন কাজে এখনো বেরিয়ে আসছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন। সম্প্রতি মহাস্থানগড় খননে বেরিয়ে এসেছে ১৪০০ বছর আগের প্রাচীন পাল শাসনামলের স্থাপত্য নিদর্শন।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ