প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২২, ০১:৪৯ এএম
পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষার্থে আবহাওয়ার ঘূর্ণিঝড় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচন্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার নিম্নচাপ প্রক্রিয়াই হলো ঘূর্ণিঝড়। যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর অধিকাংশই সমুদ্রে মিলিয়ে যায়, কিন্তু যে অল্প সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে তা অনেক সময় ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করে। একেকটি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মিশে থাকে হাজারো ধ্বংসযজ্ঞ, প্রাণক্ষয় আর বিপুল পরিমান আর্থিক লোকসান। তাই এ দুর্যোগ কারও কাম্য হতে পারে না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়শই নানা নামের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনে থাকে। আসুন জেনে নিই ইতিহাসের কয়েকটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কথা।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের প্রলয়ংকরী সব ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দেশ
হারিকেন ইরমা, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র : ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার ঝড় ছিল হারিকেন ইরমা। ৩০০ কিমি বেগের এই ঝড়ে নিহত হয় ২৮ জন। দীর্ঘ সময় পূর্ণ শক্তি ধরে রাখা এ সামুদ্রিক ঝড়টি ফ্লোরিডার দ্বীপাঞ্চলে আঘাত হানে। ইরমা সর্বপ্রথম গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে ক্যারিবিয়ান উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দ্বীপ বারমুডায় আঘাত হানে। এতে দ্বীপটির ৯০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ির ছাদ। ৪ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এরপর এটি গতিপথে কিউবা, পুয়ের্তো রিকো, হাইতিতে আঘাত হানে। পরে হারিকেনটি মেক্সিকো উপসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগস্থল হয়ে ফ্লোরিডায় এগিয়ে যায়। বন্যায় প্লাবিত হয় ফ্লোরিডার বিশাল অঞ্চল। ইরমার আঘাতে কামাগাই দ্বীপপুঞ্জসহ অনেক এলাকায় ভূমিধস হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
আরও পড়ুনঃ চেলসি ক্লিনটনের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে
হারিকেন মাইকেল, যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর আছড়ে পড়ে হারিকেন মাইকেল। এর আগে ১৯৬৯ সালে মিসিসিপি উপকূলে আগাত হানা হারিকেন ক্যামিলি এবং ১৯৩৫ সালে ফ্লোরিডায় আঘাত হানা লেবার ডে হারিকেন এর চেয়ে তীব্র ছিল। যেগুলো ব্যাপক ভূমিধস করে। একইভাবে হারিকেন মাইকেল ফ্লোরিডা প্যানহ্যান্ডলে ভূমিধস সৃষ্টিকারী সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন। পাশাপাশি বায়ুগতিতে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূমিতে চতুর্থ শক্তিশালী ভূমিধসকারী হারিকেন। হারিকেনের তীব্রতা মাপা স্কেলে এর চাপ পৌঁছায় ৯১৯ মিলিবার-এ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একশ বছরের মধ্যে এটিই হবে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়। ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগের বাতাস নিয়ে ৪ মাত্রার এই হারিকেন মাইকেল বয়ে যায়। চলতি এই ঝড়ে ৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট হারিকেন মাইকেলের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ফ্লোরিডা। গাছপালা-বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ে, তছনছ হয়ে যায় অনেক বসতবাড়ি। হারিকেনটির তাণ্ডবের পর সৈকতবর্তী শহরগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
গ্রেট ভোলা সাইক্লোন, বাংলাদেশ : বিশ্ব ইতিহাসের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয় ভোলা সাইক্লোনকে৷ ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন`৷ প্রলয়ঙ্করী এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২৪ কিলোমিটার গতিবেগে এই প্রবল ঝড়ের সময় উপকূলীয় এলাকায় ১০-৩৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, ভোলার চর বোরহানুদ্দিনের উত্তর পাশ ও চর তজুমুদ্দিন এবং নোয়াখালীর মাইজদি ও হরিণঘাটার দক্ষিণপাশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ ভোলা সাইক্লোনে কত মানুষ মারা গিয়েছিল, তার সুনির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই। সরকারি হিসাবে ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রাণহানি হয়। বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। যাদের মধ্যে এক লাখই ছিলেন জেলে৷ চার লাখের মতো বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ পৃথিবীর ইতিহাসে ঘূর্ণিঝড়ে এত বেশি লোক আর কখনো মারা যায় নি।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ২০১৭ সালের ১৮মে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করে। তাতে ভোলায় আঘাত হানা সাইক্লোনটিকেই `সবচেয়ে শক্তিশালী সাইক্লোন` হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি বিমান দুর্ঘটনা
টাইফুন হাইফোং, ভিয়েতনাম : ১৮৮১ সালের অক্টোবর মাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহরে ভয়াবহ টাইফুন আঘাত হানে৷ এতে প্রাণ হারায় ৩ লাখ মানুষ৷ প্রলয়ঙ্করী এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভিয়েতনামের হাইফোং শহর মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল। টাইফুন হাইফোংয়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এ অঞ্চল।
সাইক্লোন চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ : ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলে আঘাত হানে লাখো প্রাণঘাতী এক ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী।ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি হওয়া প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার৷ এটি মূলত চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে আছড়ে পড়েছিল৷ ঝড়ের প্রভাবে ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়৷ ২৯-৩০ এপ্রিলের এই ঘূর্ণিঝড়কে আখ্যা দেওয়া হয় ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে৷ এতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়৷ এ ছাড়া প্রায় ১ কোটি মানুষ সর্বস্ব হারায়। সে সময় প্রায় ১০ লাখ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধারণা করা হয় এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়।
নার্গিস, মায়ানমার : দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি হলো নার্গিস৷ ঘূর্ণিঝড় নার্গিস উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার৷ যা ২০০৮ সালের মে ৩ তারিখে বার্মার উপকূলে আঘাত হানে। এতে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়৷ এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
টাইফুন নিনা, চীন : যদিও চীনে টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড় খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবুও ১৯৭৫ সালের ৩১ জুলাই চীনের হেনান প্রদেশে টাইফুন নিনার ভয়াবহতা অতীতের সব ঝড়কে পেছনে ফেলে দেয়। ভয়াবহ ওই ঝড়ে বন্যা ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ। এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার। বৃষ্টিপাত হয় ৭০০ মিলিমিটার। এতে ৩ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আর্থিক ক্ষতি নির্ধারণ করা হয় ১.২ বিলিয়নের ওপরে।
টাইফুন জেবি, জাপান : টাইফুন জেবি ২০১৮ সালে জাপানে আঘাত হানে। গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী টাইফুন এটি। টাইফুন জেবির প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাত হয়। ১০ লাখ মানুষকে আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টায় ২১৬ কিলোমিটার বেগে টাইফুন জেবি জাপানের পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ঝড়ে প্রাণ হারান ১৭ জন। এছাড়াও অন্তত ৩০০ জন আহত হন।এতে বন্যা ও ভূমিধসেরও সৃষ্টি হয়। এটি ১৯৯৩ সালের পর জাপানে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
টাইফুন মাংখুট, হংকং : ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার বেগে ফিলিপিন্সের উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসলীলা চালানো পর ‘মাংখুট টাইফুন’ আছড়ে পড়ে দক্ষিণ চীনের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গুয়াংডংয়ে এবং হংকং উপকূলবর্তী এলাকায়। ঝড়ের কবলে মারা যায় অনেক মানুষ। বিধ্বস্ত হয় হংকংয়ের উপকূলবর্তী জনবহুল এলাকা। জানা যায়, চীনের গুয়াংডং প্রদেশের ৭টি শহরের কয়েক লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়। বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় বলে জানায় আবহাওয়া দফতর। মাংখুটের কবলে ফিলিপিন্সে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। অত্যধিক বর্ষণে বেশ কিছু জায়গায় ধস নামে। এই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। মাংখুটের আঘাতে ফিলিপিন্সে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে। বেশির ভাগই মারা যায় ভূমিধসে চাপা পড়ে। মাংখুটকে ২০১৮ সালে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বিবেচনা করা হয়।
দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন, বাংলাদেশ : প্রাণহানি ও ভয়ঙ্করের দিক থেকে পৃথিবীর ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাসে ষষ্ঠ স্থান দখল করে আছে বাকেরগঞ্জ ঘূর্ণিঝড়। ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর বাকেরগঞ্জের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় ‘দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ ১৮৭৬’ নামেও পরিচিত। সে সময় ব্রিটিশ শাসনামল চলছিল৷ মেঘনা মোহনা এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালী উপকূল প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে বাকেরগঞ্জের নিম্নাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হয়ে যায়, ঝড়ে আক্রান্ত ব্যতীত সমপরিমাণ মানুষ ঝড়-পরবর্তী বিভিন্ন অসুখ ও অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। ভয়াবহ সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত ২ লাখ মানুষ৷ আরও অধিক মানুষ মারা যায় দুর্যোগ-পরবর্তী মহামারী এবং দুর্ভিক্ষে।
ঘূর্ণিঝড় তিতলি, ভারত : ২০১৮ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রথম ঘূর্ণিঝড় তিতলি। তিতলি শব্দের অর্থ প্রজাপতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঘূর্ণিঝড় সমূহের নাম দিয়ে থাকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। সাইক্লোন তিতলির নাম দিয়েছে পাকিস্তান। তিতলির আগে গঠিত হওয়া সাইক্লোনধর্মী ঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছিল লুবান, যা ওমানের দেওয়া। প্রথমে ভারতের উড়িষ্যার গোপালপুরের কাছে আঘাত হানে। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলায় আঘাত হানার সময় ‘তিতলি’র গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অন্ধ্রে প্রলয়কান্ড চালিয়ে উত্তরের দিকে এসে উড়িষ্যার গানজাম জেলায় আছড়ে পড়ার সময় এর তীব্রতা কিছুটা কমে যায়। সে সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০২ কিলোমিটার পর্যন্ত।
হারিকেন প্যাট্রিসিয়া, মেক্সিকো : হারিকেন প্যাট্রিসিয়া ছিল পশ্চিম গোলার্ধের ভয়াবহ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ঘণ্টায় ৩৪৫ কিলোমিটার বেগে হারিকেন প্যাট্রিসিয়া পশ্চিম মেক্সিকোর উপকূলে আঘাত হানে। এটিকে সাম্প্রতিককালে পশ্চিম গোলার্ধে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে তীব্রতম বলে পরিমাপ করা হয়। ২০১৫ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এটি সৃষ্টি হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে এটিকে ক্রান্তীয় ঝড়ো প্রবাহ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই সময়ে ২২ অক্টোবর এটি ক্রমশ প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে পরিণত হয় এবং আবহাওয়াবিদরা এটিকে ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অবহিত করেন। ১৯৬০ সালের পর ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধির এই হার আগে কখনো রেকর্ড করা হয়নি। শুধু ১৯৯৭ সালে ঘূর্ণিঝড় লিন্ডার মাত্রা অনেকটা এরকম হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৪৬৩ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়।
ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ, ভারত : ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের ৬ তারিখ বঙ্গোপসাগরে আন্দামানের কাছে এক গভীর নিম্নচাপ থেকে উৎপন্ন হয়। পরে এটি প্রবল সাইক্লোনে রূপ নেয়। ৯ তারিখ তা অতি প্রবল হয়ে ওঠে। উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ১২ তারিখ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলে আছড়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। অক্টোবরের ১১ তারিখ বিকালে হুদহুদের অবস্থান ছিল উড়িষ্যা-অন্ধ্র রাজ্য থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে। পরবর্তীতে ঝড়টি এই দুটি প্রদেশেরই উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবল আঘাত হানে। এর ফলে এই দুই অঞ্চলেও প্রবল বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত ঘটে থাকে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশেষ করে শ্রীকাকুলাম ও বিজয়নগর অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সর্বাধিক। হুদহুদের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেও এর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটেছিল। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। এই ঝড়ের ফলে মোট ১২৪ জনের মৃত্যু ঘটে ও ২১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল।
হারিকেন স্যান্ডি, জ্যামাইকা : আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ২০১২ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে সৃষ্টি হয় হারিকেন স্যান্ডি। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যে জ্যামাইকা, বাহামা, হাইতি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার মতো দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, জলোচ্ছ্বাস, ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। প্রাণহানি ঘটে ১২৭ জনের। আর্থিক মানদন্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। ২০১২ সালে আটলান্টিকে উদ্ভূত মৌসুমের দশম ঘূর্ণিঝড় হিসেবে হারিকেন স্যান্ডি বিবেচিত হয়। বৃহত্তম এ হারিকেনটির কেন্দ্রবিন্দু থেকে বাতাসের বিস্তৃতি প্রায় ১১০০ মাইল হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ সুস্বাদু খাবার সিঁদুল এবং প্যালকা
ঘূর্ণিঝড় সিডর, বাংলাদেশ : বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়ালতম প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলা ঘটে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। দেশের দক্ষিণ উপকূলে ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩০টি জেলায় আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ প্রায় ৬ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল৷ যদিও রেডক্রিসেন্টের হিসাব মতে প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার৷ উত্তর ভারত মহাসাগরে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্ট এ ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৬০ থেকে ৩০৫ কিলোমিটার৷ সিডর খুলনা ও বরিশাল এলাকায় তাণ্ডব চালায়৷ সমুদ্র থেকে উঠে আসা ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে সব কিছু ভেসে যায়৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২টি জেলার ২০ লাখ পরিবার৷ উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ছয় লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যায়৷
ঝড়ের প্রভাবে প্রায় ৯৬৮,০০০ ঘরবাড়ী ধ্বংস এবং ২১০,০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ঝড়ে সুন্দরবনের প্রাণীদের পাশাপাশি প্রায় ২৪২,০০০ গৃহপালিত পশু এবং হাঁসমুরগী মারা গেছে। এতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়।
সাজেদ/