• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সফল নারী

গৃহিণী থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রথম নারী মেয়র হওয়ার গল্প

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম

গৃহিণী থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রথম নারী মেয়র হওয়ার গল্প

ছবিঃ সিটি নিউজ ঢাকা

আবু সালেহ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন আঞ্জুমান আরা বন্যা। এর মাধ্যমে ঠাকুরগাঁওবাসী পেয়েছে প্রথম নারী মেয়র। আঞ্জুমান আরা বন্যাই এখন পর্যন্ত এ জেলার শীর্ষ কোনো জনপ্রতিনিধির আসনে বসা প্রথম নারী। 

নারী নেতৃত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন না হলেও, ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় শীর্ষ পদের জন্যে নতুন অভিজ্ঞতাই বলাযায়। তাই প্রথম নারী মেয়র নিয়ে স্থানীয়দের ছিলো বিশেষ আগ্রহ । সেইসাথে আঞ্জুমান আরা বন্যার জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মেয়র হবার দুই বছরে সকল শঙ্কা কাটিয়ে নিজেকে প্রমান করেছেন বন্যা। 

আঞ্জুমান আরা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলেন। দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজও করেছেন। আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। তাঁর স্বামী এ টি এম সামসুজ্জোহাও পেশায় সাংবাদিক। এক ছেলে ও একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়েই ছোটো সংসার তার।

তবে গৃহিণী থেকে মেয়ের হবার যাত্রাটি মোটেই সহজ ছিলোনা বন্যার। সল্প আয়ের সংসারে একজন গৃহিণীর রুপে যেমন সংগ্রাম করেছেন, তেমনি নিজেকে প্রমান করতে ছুটে বেড়িয়েছেন দিগদিগন্ত।

আঞ্জুমান আরা ১৯৮৭ সালে মেট্রিক পাশ করেন। এর পরে ৮৯ সালে ৪ বছর মেয়াদে নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন বন্যা। বিয়ের পরে আদর্শ গৃহিণী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে জান তিনি। স্বামীর সল্প আয়ের সংসারে প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে সংগ্রামী জীবন চলতে থাকে বন্যার। একজন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে পরিবারের কষ্টের নিজ অভিজ্ঞতায় ২০০৮ সাল থেকে জেলার অন্যান্য প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে সুইড বাংলাদেশ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের সূচনা হয় তার হাত ধরেই। এই সংগ্রামের ধারাবাহিতাই তাকে রাজনীতির অঙ্গনে পরিচিত করে তোলে। 

মেয়র বন্যা বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারে টানাটানির সংসার ছিলো আমার। কাজের সুবাদে স্বামী বাইরে যেতেন। ছেলে স্কুলে বা কলেজে। আমারও সামাজিক কাজের দিকে ব্যাপক আগ্রহ ছিলো। বাসায় প্রতিবন্ধী মেয়েকে একা ফেলে যাই কি করে। তাই অনেক সময় প্রতিবন্ধী মেয়েকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হইতো। সাথে প্রতিবন্ধী মেয়ে,তাই আমার এই অবস্থা দেখে অনেকে হেসেছে, আর তা দেখে আমি দিনের পর দিন কেঁদেছি। কিন্তু কখনওই হতাশ হইনি। সেসকল মানুষকে বার বার হাসার সুযোগ করে দিয়েছি। 

আঞ্জুমান আরা বন্যা জানান, সেবা মূলক যে কোনো পেশার সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টাই তাকে এতদূর এনেছে। প্রথমে নার্সিং, এরপর সাংবাদিকতা ও পাশাপাশি ওকালতি করার চেষ্টাও করেছেন বন্যা। সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। জনসেবার সপ্ন লালন করতে বিভিন্ন সময় নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বার বার বিভিন্ন পদে দলিয় মনোনয়ন কিনেও ব্যার্থ হয়েছেন। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। সবশেষে ২০২১ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা মেয়র নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন তার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও ধৈর্যের উপহার বলে মনেকরেন বন্যা।

নির্বাচনে জয়ের পর আঞ্জুমান আরা বেগম বলেছিলেন, ‍‍`জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। পৌরবাসীর ভালোবাসায় আমি ধন্য। পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ঠাকুরগাঁও পৌরসভাকে পরিবেশ ও নারী-শিশুবান্ধব, সবধরনের বর্জ্য-দূষণমুক্ত একটি আধুনিক পৌরসভায় উন্নীত করতে চাই।’ তার ফল সরূপ দুইবছরে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ব্যাপক আয়োজনে বাসিন্দাদের সন্তুষ্টি দৃশ্যমান। 

আঞ্জুমান আরা বন্যা মেয়র পদে অসীন হওয়ার মধ্যদিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলায় নারীরা অগ্রগামী হতে উৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা।

ঠাকুরগাঁও প্রেশক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক মনসুর আলী মনে করেন, মেয়র বন্যার সংগ্রামী জীবন থেকে পাওয়া সফলতা ঠাকুরগাঁও জেলা তথা দেশের অন্যান্য নারীদের জন্যে উদাহরণ হতে পারে। চেয়ারে বসার দুই বছরে বন্যা একজন সফল মেয়র হবার প্রমাণ ইতিমধ্যে দিয়েছেন। ছোটো অবস্থান থেকে কিভাবে সপ্ন পূরণ করা যায় তা বন্যাকে দেখে শেখা সম্ভব। 

এই বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। তিনি নারী নেতৃত্ব ও নারীদের কর্মমুখী করতে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। তার উদাহরণ মেয়র বন্যা। বন্যা এই দুই বছরে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে। আশাকরি মেয়াদের আগামী সময়ে নিজেকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন। 

 

সাজেদ/
 

আর্কাইভ