 
              প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
 
                 ইসরাইলের যুদ্ধ-কুকুরের আক্রমণের শিকার ফিলিস্তিনি গর্ভবতী মা তাহরির হুসনি আল আরিয়ান
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বর্বর হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। বোমা, রকেট ও ড্রোন হামলা ছাড়াও গাজায় যুদ্ধ কুকুর ব্যবহার করছে ইসরাইলি সেনারা। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব কুকুর গাজার অসহায় নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করছে।
এমনই একটি আক্রমণের লোমহর্ষক বর্ণনা ফুটে উঠেছে এক ফিলিস্তিনি গর্ভবতী মা তাহরির হুসনি আল আরিয়ানের কথায়।
বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই কুকুরগুলো ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করে ভবন অনুসন্ধানের কাজে ব্যবহার করছে। যার শিকার হচ্ছেন ভবনে বেঁচে যাওয়া ও লুকিয়ে থাকা অসহায় মানুষ।
৯ মাসের গর্ভবতী আরিয়ান তার তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের বাড়িতে ছিলেন। আর সেই সময় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিবেশী আল-মানারা আক্রমণ করে। আক্রমণের পর তারা লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেও তাদের হানা দেয় একটি কুকুর। ওই আক্রমণটি চলে ১০ মিনিট ধরে। এতে তার গর্ভে থাকা সন্তানের জন্ম হয়। যদিও সেই আক্রমণ কেড়ে নেয় তার নবজাতক শিশুকে। এ ঘটনার পর এখনও ট্রমায় ভুগছেন তিনি। ফিরতে পারছেন না বাড়িতে।
আরিয়ান নির্মম এই ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘তারা হঠাৎ করে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করে এবং আকাশে আগুন জ্বলে ওঠে।’ তবে বিল্ডিং ছেড়ে যেতে না পেরে আরিয়ান ও তার পরিবার নিচ তলায় তার শ্যালকের অ্যাপার্টমেন্টে আশ্রয় নেয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছুই করতে পারিনি। আমরা আটকা পড়েছিলাম। আমরা কোনো লাইট জ্বালাতে ভয় পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম ড্রোন আমাদের টার্গেট করবে। কিন্তু তারপর সিঁড়ি বেয়ে উঠার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম, কীসের আওয়াজ। এটি কি সেনাবাহিনী।’
কিন্তু না, এটা ছিল একটি কুকুর। যার মাথায় একটি লাইট এবং একটি ক্যামেরা ছিল, বাড়ির প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করছে সেই কুকুর। এবং পরে এটা সোজা আমাদের দিকে বাথরুমে এসেছিল।
কুকুরটি সামনে চলে এলে পরিবারটি দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে কুকরটি। আরিয়ানার মতে, এটি একটি সাধারণ কুকুর ছিল না। এটি বিশাল, একটি সিংহের মতো ছিল এবং কালো।
কুকুরটি প্রথমে দরজা ভেঙে তার ১৭ বছর বয়সি বোনকে আক্রমণ করে, যে সাত মাসের গর্ভবতী ছিল। এটি তার প্রার্থনার পোশাক ছিঁড়েছিল, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে, এটি দ্রুত চলে যায়। কিন্তু তারপর, কুকুরটি আবার ফিরে আসে।
আরিয়ান বলেন, ‘আমি প্রথমে এটি দেখতে পাইনি, কিন্তু তারপরে আমি অনুভব করি আমার ডান উরুতে কামর দিয়েছে কুকুরটি। আমাকে নখ দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে। আমার স্বামী এবং অন্যরা এটিকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা পারেনি। এটি আমাকে করিডোরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল এবং আমি অনুভব করতে পারি যে আমার পেটে থাকা সন্তান বেরিয়ে যাচ্ছে।’
পরে বাথরুমের বাইরে থাকা ইসরাইলি সেনারা হস্তক্ষেপ করে। কুকুরটিকে থামাতে চারজন সৈন্য লেগেছিল। যা নিয়ে আরিয়ানা বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি যে পরে কী হয়েছিল, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে বলেছিলেন। প্রথম সৈনিক আমাকে কুকুরের দাঁত থেকে বের করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সৈন্যরাও পারেনি। অবশেষে, চতুর্থ সৈনিক তার মাথায় থাপা দিয়ে সফল হয় এবং কুকুরটি আমাকে ছেড়ে দেয়।’
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      