• ঢাকা শুক্রবার
    ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে ৪ মিনিট

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২, ০২:৪২ এএম

ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে ৪ মিনিট

সৈয়দ আতিক, ঢাকা

ড. বেনজীর আহমেদ। বাংলাদেশ পুলিশের সদ্য বিদায়ী মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। যার হাত ধরে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে এসেছে স্বচ্ছতা, হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। তার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও বিচক্ষণতায় পুলিশ বাহিনী পেয়েছে অন্য এক মাত্রা। গত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সমাপ্তি টেনে অবসরে যান তিনি। বিদায় বেলায় কেঁদেছেন নিজে, কাঁদিয়েছেন সহকর্মীদের। 

হয়তো তার শরীর থেকে বিদায়ী ফুলের ঘ্রাণ এখনও যায়নি। সবে একটি রাত পেরুলো। এখনও তার মানসপটে ভেসে উঠছে বিদায়ের মুহূর্ত। সহকর্মীদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো এখন যেন শুধুই স্মৃতি। এমনই একটি মুহূর্তে কথা হলো আমাদের সবার প্রিয় ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে।  বিদায়ের পরদিন ড. বেনজীর আহমেদকে মুঠোফোনে সংযুক্ত করতে সক্ষম হলাম।

শারদীয় মাসের শনিবার আজ। দুপুরের তপ্তরোদ। উষ্ণ আবহাওয়া। আকাশে সাদা মেঘ দৌড়ে বেড়াচ্ছে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। এমনই এক পরিবেশে মুঠোফোন নিলাম হাতে। সংরক্ষিত তালিকা থেকে নাম্বার বের করে ফোন করলাম ড. বেনজীর আহমেদকে। ফোন রিং হতে বেশি সময় নিলেন না। শোনা গেলো চির চেনা সেই ভরাট কণ্ঠ।

ড. বেনজীর আহমেদের সঙ্গে সিটি নিউজ ঢাকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ আতিক। ফাইল ছবি

কুশলাদি বিনিময়ের পর দীর্ঘ ফোনালাপে চলে আসে অনেক কথা। পুলিশ, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা, সোশ‍্যাল মিডিয়া এবং কিছুটা ব‍্যক্তিগত আলাপচারিতাও।

প্রসঙ্গক্রমে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার আশংকা ছিল সেখানেই পুলিশ নিজেকে সবটুকু দিয়ে নিয়োজিত করেছে। আর আমি সেখানেই যথাযথ নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করেছি।’

বেনজীর আহমেদ অত্যন্ত বন্ধুসুলভ একজন মানুষ। তিনি বহুমাত্রিক গুনের অধিকারী। ছিলেন একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা। ছিলেন শতভাগ পেশাদার, নির্ভিক ও অকুতোভয়। আরও ছিলেন কৌশলি ও দূরদর্শী এবং একজন দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা। বর্ণাঢ্য এক কর্মজীবনের মধ্য দিয়ে তৈরি করেছেন পুলিশ বাহিনীর এক অনন্য ইতিহাস। বলা যায় তিনি একজন ‘ওয়ান পিস’।

কোথাও কোনো ব্যক্তিস্বার্থ ছিল না উল্লেখ করে সদ‍্য বিদায়ী পুলিশ প্রধান বলেন, ‘যেখানেই দেখেছি আশঙ্কা, সেই শঙ্কা দূর করতে পুলিশ প্রধান হিসেবে আমি আমার করণীয়টুকু করেছি। এক্ষেত্রে অবশ্যই শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছি। আমি সর্বোপরি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেখানে যে মাত্রার গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভিযান প্রয়োজন ছিল সেখানে সে মাত্রাই প্রয়োগ করেছি।’

দুষ্টু রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা চায় না দেশটা সমৃদ্ধ হোক। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক- তারাই দুষ্টু রাজনীতি করে। এদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নেই। আমি যতদিন পুলিশ প্রধান ছিলাম সত্যকে সত্য বলা এবং ন্যায়কে ন্যায় বলার যে অঙ্গীকার, আমি সেই শপথে কাজ করেছি।’

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশ আমার ভালোবাসার দেশ। আমি এ দেশের একজন সন্তান হয়ে মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি।’

বেনজীর আহমেদ অত্যন্ত বন্ধুসুলভ একজন মানুষ। তিনি বহুমাত্রিক গুনের অধিকারী। ছিলেন একজন মেধাবী পুলিশ কর্মকর্তা। ছিলেন শতভাগ পেশাদার, নির্ভিক ও অকুতোভয়। আরও ছিলেন কৌশলি ও দূরদর্শী এবং একজন দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তা। বর্ণাঢ্য এক কর্মজীবনের মধ্য দিয়ে তৈরি করেছেন পুলিশ বাহিনীর এক অনন্য ইতিহাস। বলা যায় তিনি একজন ‘ওয়ান পিস’। 

তিনি এমন এক সময় পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন যখন বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবক হিসেবে তাকে বড্ড প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন ছিল তার মতো একজন সাহসী যোদ্ধার। তিনি দক্ষ হাতে সামাল দিয়েছেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। যেটা হয়তো শুধুমাত্র একজন বেনজীর আহমেদের পক্ষেই সম্ভব ছিল।

যেখানেই দেখেছি আশঙ্কা, সেই শঙ্কা দূর করতে পুলিশ প্রধান হিসেবে আমি আমার করণীয়টুকু করেছি। এক্ষেত্রে অবশ্যই শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছি। আমি সর্বোপরি আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যেখানে যে মাত্রার গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভিযান প্রয়োজন ছিল সেখানে সে মাত্রাই প্রয়োগ করেছি।

ড. বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি

বাংলাদেশ এমন এক আইজিপি চেয়েছিল যিনি ছিলেন ড. বেনজীর আহমেদ। আর কবে এ রকম একজন পুলিশ প্রধান পাবে বাংলাদেশ, তা জানে না কেউ। হয়তো তার মত আর কেউ নাও হতে পারে! কেননা বেনজীর আহমেদ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি সর্বদাই সজাগ ছিলেন তিনি। 

ড. বেনজীর আহমেদ একজন স্মার্ট, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক পুলিশ-প্রধান ছিলেন। তার রয়েছে অগাধ পাণ্ডিত‍্য। তার বক্তব্যে, মেধা, মননে ও মগজে ছিল একটা শিক্ষণীয় ব্যাপার। তিনি কিছু বললে তা থেকে শেখার অনেক কিছু বের হয়ে আসে। তিনি যখন কথা বলেন, বক্তব্য দেন - সেই মধুরতা অন্যরকম। ড. বেনজীর আহমেদ যা বলতেন তাতে থাকতো তথ্যনির্ভর প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ছোঁয়া।

ড. বেনজীর একজন মানবদরদী মানুষ ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের পাশে। একাধারে তিনি একজন কঠোর মানুষও ছিলেন বটে- সেটা অপরাধ এবং অপরাধীদের জন্য। 

একদিন আগে ৩০ সেপ্টেম্বর আইজিপির দায়িত্ব থেকে বিদায় নেন ড. বেনজীর আহমেদ। বাংলাদেশ পুলিশে ছিল তার দীর্ঘ ৩৪ বছরের বিচরণ।  বিদায় বেলায় তিনি সহকর্মীদের কাঁদিয়ে গেছেন, নিজেও কেঁদেছেন। তার শূন্যতা হয়তো কখনই পূরণ হবে না। তার বিদায়ে পুলিশ পরিবারে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। সত্য ও সুন্দরের জন্য তিনি লড়েছেন আজীবন। বেঁচে থাকবেন পুলিশের ইতিহাসে এক পথিকৃৎ হয়ে।

পরিশেষে কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায় ইতি টানছি - “ধান কাটা হয়ে গেলে মাঠে-মাঠে কতবার কুড়ালাম খড়/ বাঁধিলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনার দেশ ভালোবেসে।”

 

সৈয়দ আতিক

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সিটি নিউজ ঢাকা। 

 দৈনিক যুগান্তরের সাবেক হেড অব ক্রাইম।

 

 

আর্কাইভ