প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৬:০৭ এএম
একটি স্বাধীন দেশের প্রধান উপাদান ভূখন্ড, নাগরিক, সরকার ও সংবিধান। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অজিত হয়েছিল স্বাধীনতা। এরপর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। রচিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ (বিজয় দিবস) থেকে কার্যকর হয়। সেই হিসেবে আজকের দিনটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমস্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সংবিধান প্রণয়নের জন্য ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছর ১৭ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে। তারা সংবিধান প্রনয়নে জনগণের মতামত আহ্বান করেন। সংগ্রহীত মতামত থেকে ৯৮টি সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।
এরপর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপিত হয়। এর উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমান বলেন,‘এই সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।
বাংলাদেশের সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয়। পরে একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। তাই এটি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিদ্যমান। তবে ইংরেজি ও বাংলার মধ্যে অর্থগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হলে বাংলা রূপ অনুসরণীয় হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ আছে, দেশটি হবে প্রজাতান্ত্রিক। গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি। জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস। বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন। জনগণই হবে সকল ক্ষমতার উৎস।
সংবিধানে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সংবিধানের বাংলা ভাষারূপ পর্যালোচনার জন্য ড. আনিসুজ্জামানকে আহবায়ক, সৈয়দ আলী আহসান এবং মাযহারুল ইসলামকে ভাষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে রেখে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছিল গণপরিষদ ভবন। ওই ভবনে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সহযোগিতা করেন ব্রিটিশ আইনসভার খসড়া আইন-প্রণেতা আই গাথরি।
সে সময়ে সংবিধান ছাপাতে ১৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিলো। সংবিধান অলংকরণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। সদস্য ছিলেন শিল্পী হাশেম খান, জনাবুল ইসলাম, সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও আবুল বারক আলভী।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংবিধান দিবস বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, সংবিধান প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তীতে ৪ নভেম্বরকে ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস ও সংবিধানের চেতনা ধারণের জন্য জাতীয় সংবিধান দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।