• ঢাকা সোমবার
    ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৩, ০৩:৫৩ এএম

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো জাতিসত্তার মানুষদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ এবং শঙ্কা প্রকাশ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ প্রদানের জন্য ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়েছে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধিদল।

কমিশন মনে করে, কার্যকর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে ম্রো সম্প্রদায়ের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) ফারহানা সাঈদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বার্তায় বলা হয়, হামলার শিকার রেংয়েন ম্রোপাড়ার পাড়াবাসীর অভিযোগ, সোমবার (২ জানুয়ারি) তাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কোম্পানি।

উল্লেখ্য যে, গত ২৬ এপ্রিল ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষদের এলাকার ৩৫০ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেওয়া, পানির ঝর্ণা বিনষ্ট করা এবং পরবর্তীতে এর ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে তিনটি গ্রামের মানুষের অত্যাধিক কষ্টে জীবনযাপনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছিল কমিশন।

সেসময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন থেকে উক্ত এলাকার ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠিকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।

ওই ঘটনায় কমিশন থেকে নিম্ন লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়:

১. স্থানীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে মর্মে অবহিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সচিব, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।

২. স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যাতে কোনোভাবেই কোনো ধরনের হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বলা হয়।

৩. এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো সমস্যা না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভুক্তভোগীরা যাতে কোনো হয়রানি শিকার না হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান পুলিশ সুপারকে বলা হয়।

৪. ঘটনার বিষয়ে সার্বিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অবস্থা প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিলের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসককে বলা হয়।

৫. বিষয়টি সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন সমন্বয় এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে অধিকতর তথ্যের প্রয়োজন থাকায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনকে অবহিত করার জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসককে বলা হয়।

কমিশন থেকে বিভিন্ন দপ্তরে উল্লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হলেও গত ২ জানুয়ারি শেষ রাতে পুনরায় এ ধরনের হামলা হয়েছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কমিশন মনে করে, এসব অভিযোগের বিপরীতে কার্যকর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে ম্রো সম্প্রদায়ের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সদস্য কংজরী চৌধুরীর নেতৃত্বে, পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) ও জেলা ও দায়রা জজ মো. আশরাফুল আলমসহ চার সদস্যের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

পাশাপাশি, স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে যাতে কোনোভাবেই কোন হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আর্কাইভ