• ঢাকা শুক্রবার
    ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০২৩, ১২:৫৯ এএম

সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গত ১৫ দিন ধরে ভোলার মনপুরার এফবি রিনা-১ নামে একটি ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ট্রলারটির পাশে থাকা মাছ ধরার মনপুরার অন্য ট্রলারের জেলেরা দাবি করছেন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায়। এতদিনেও নিখোঁজ জেলেদের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় জেলে পরিবারের চলছে শোকের মাতম।

রোববার সকাল ১০টায় ঘটনার সত্যতা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন মনপুরা থানার ওসি জহিরুল ইসলাম, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল ও এফবি রিনা-১ ট্রলারের মালিক আক্তার হোসেন।

এদিকে নিখোঁজ জেলে শেখ ফরিদের স্ত্রী কুলসুম বেগম অভিযোগ করে জানান, ট্রলার মালিকপক্ষ জোর করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সাগরে মাছ ধরতে পাঠিয়ে জেলেদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

অপরদিকে ট্রলার মালিক আক্তার হোসেন উল্টো অভিযোগ করে জানান, জেলেরা না জানিয়ে রাতের আঁধারে ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। তিনি এ ব্যাপারে গত শুক্রবার বিকালে মনপুরা থানায় জিডি করেছেন।

ট্রলার মালিক আরও জানান, ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলেদের অনুসন্ধানে তার ভাই মনির ও আবুল পৃথক দুইটি ট্রলার নিয়ে গত ১০ দিন ধরে সাগরে অভিযান চালায়। কিন্তু নিখোঁজ জেলেসহ ট্রলারের কোনো হদিস না পেয়ে তারা শুক্রবার মনপুরার জনতা ঘাটে ফিরে আসেন।

এফবি রিনা-১ ট্রলারে থাকা নিখোঁজ ২০ জেলে হলেন- মো. জাহাঙ্গীর (৪০), শেখ ফরিদ (৫৫), ছিদ্দিক (৪৫), শামীম (২৩), আলাউদ্দিন (৫৬), আবুল খায়ের (৬৫), বাতেন (৪০), ইয়াছিন (৩৫), জয়নাল আবেদিন (৭০), মিলন (৩৫), ইসলাম আলী (৫৫), ফিরোজ (৪৫), সোহাগ (৪৫), অলিউদ্দিন (৪১), সোহাগ আখন (৩৬), সুমন (৩০), আবুল কালাম (৬৪), আজাদ (৩৫), ইয়াকুব আলী (৬০) ও নুর সর্দার (৫৫)। এদের সবার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২২ অক্টোবর রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মনপুরার জনতা ঘাট হতে রাতের আঁধারে অন্যান্য ট্রলারের সঙ্গে এফবি রিনা-১ ট্রলারের ২০ জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যায়। মনপুরার অন্যান্য ট্রলারের পাশাপাশি দূরত্বে বঙ্গোপসাগরের ড্রাম বয়া নামক স্থানে ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলেরা জাল ফেলে মাছ শিকার করছিল। ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল হতে থাকে।

পরে ২৫ অক্টোবর সাগরে ফেলা জাল দ্রুত তুলে মনপুরার অন্যান্য ট্রলার ফিরে আসলেও নিখোঁজ এফবি রিনা-১ ট্রলারটি আসেনি। পরে ২৬ অক্টোবর ট্রলার জনতা ঘাটে ফিরে না আসায় এফবি রিনা-১ এর মালিক তার দুই ভাই আবুল ও মনিরকে পৃথক দুইটি ট্রলার নিয়ে সাগরে নিখোঁজ জেলেদের খোঁজ করতে পাঠায়। কিন্তু ১০ দিন খোঁজ করার পরও নিখোঁজ ট্রলারসহ জেলেদের কোনো হদিস না পাওয়ায় ট্রলার দুইটি মনপুরায় ফিরে আসে। পরে ট্রলার মালিক ৩ নভেম্বর শুক্রবার বিকালে থানায় জিডি করেন।

সাগরে নিখোঁজ ট্রলারের পাশিপাশি দূরত্বে মাছ শিকার করা অপর ট্রলারের মাঝি শিপন জানান, সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢেউ উত্তাল হলে নিখোঁজ ট্রলারে জেলেরাসহ আমার ট্রলারে থাকা জেলেরা দ্রুত জাল তুলে ফেলি। পরে মনপুরার দিকে রওনা করি। কিছুক্ষণ পরে নিখোঁজ ট্রলারটি আর দেখা যায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ট্রলারটি সাগরে ডুবে গেছে বলে তিনি মনে করছেন।

এ ব্যাপারে মনপুরা উপজেলার ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল জানান, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে এফবি রিনা-১ ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ থাকায় পরিবারে সদস্যরা আহাজারি করছেন। নিখোঁজ জেলে পরিবারের সদস্যদের বাড়ি গিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছি।

এ ব্যাপারে মনপুরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ট্রলারসহ নিখোঁজ জেলেদের ব্যাপারে থানায় জিডি করেছেন ট্রলার মালিক আক্তার হোসেন। তবে নিখোঁজ জেলেদের খোঁজ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ