• ঢাকা বুধবার
    ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২
বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ

চলতি বছরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখে পৌঁছাতে পারে

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৬:৪৪ এএম

চলতি বছরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখে পৌঁছাতে পারে

সিটি নিউজ ডেস্ক

বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০ জুন। প্রতিবছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিনটি আসে, চলেও যায়। দিবসটিতে দুনিয়াজুড়ে শরণার্থীদের পক্ষে দাঁড়াতে যুদ্ধ-নির্যাতন বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানা আঙ্গিকে আলোচনা হয়। তারপর যেমন চলার, চলে তেমনই। যুদ্ধ ও তীব্র নির্যাতন ক্রমান্বয়ে শরণার্থী বানাচ্ছে। প্রতিবছরই বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। মিয়ানমারে সামরিক নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিতে শুরু করে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিদিন প্রায় ৯৫টি শিশুর জন্ম হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। শিবিরে ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ নারী-শিশু রয়েছে। শরণার্থীদের মধ্যে নারী-শিশুদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ও অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশে কী পরিমাণ শরণার্থী আছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চরম যুদ্ধে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। শুধু রোহিঙ্গা নয়, বিশ্বের সব শরণার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। এদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে হবে। শরণার্থীদের জীবনের প্রতিটি ইঞ্চি দুঃখ আর কষ্টে ভরা। যুদ্ধ আর দেশে দেশে সংঘাত, চরম নির্যাতনের ফলে শরণার্থীর সৃষ্টি হয়। বিশ্বে কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেই এ পৃথিবী থেকে শরণার্থী শব্দটি উঠে যাবে। মানুষ তার পূর্ণ অধিকার নিয়ে বাঁচবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সমাজ-ইতিহাস, সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দেখলেই চোখে পড়বে-বিশ্বযুদ্ধের সময়ের শিশুরা হৃত স্বদেশ ও শৈশবের মূল্য চুকিয়েছে দীর্ঘকাল, এমনকি একাধিক প্রজন্ম ধরে। সেই বিষাদগাথায় হিরোশিমা-নাগাসাকির শিশু যেমন ছিল, তেমন ব্যতিক্রম নয় আজকের ইউক্রেনীয় শিশুরাও। নতুন করে যুদ্ধ চলছে ইরান-ইসরাইলের মধ্যে। সমরাঙ্গনের সমান্তরালেই আরও বড় একটা যুদ্ধ চলছে-অত্যাচার, পাচার, শোষণ, বিভেদের হাত থেকে শিশুদের বাঁচানোর যুদ্ধ; মাথার ওপর একটা ছাদ, থালায় একটু খাবার, স্কুলের শিক্ষা জোগানোর সংগ্রাম।

অতীতে রাজায়-রাজায় যুদ্ধ হতো, সাধারণ মানুষ হতো দুর্গত। রাজতন্ত্র পেরিয়ে গণতন্ত্র এলেও যুদ্ধ থামেনি। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ দহন ও পরোক্ষ আঁচ দুই-ই সইতে হয় নারী ও শিশুদের। ইউনিসেফের তথ্য বলছে, ইউক্রেনের ২০ লাখ শিশু দেশছাড়া হয়েছে। দেশের ভেতরে স্থানচ্যুত হয়েছে ২৫ লাখ ইউক্রেনীয় শিশু। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে গুঁড়িয়ে গেছে শৈশব।

জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৮ কোটি ৯৩ লাখ, যা ভবিষ্যতে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উদ্বাস্তুদের মধ্যে ২ কোটি ৭১ লাখ শরণার্থী। বাকিদের কেউ রাষ্ট্রহীন, কেউ আশ্রয়প্রার্থী, কেউ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। শরণার্থীদের মধ্যে সিরিয়া থেকে ২৭ শতাংশ, ভেনিজুয়েলা ১৮ শতাংশ, আফগানিস্তান ১১ শতাংশ, দক্ষিণ সুদান ৯ শতাংশ এবং মিয়ানমার থেকে ৫ শতাংশ আগত। এছাড়া ৩০ শতাংশ শরণার্থী বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে আগত। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ মাত্র ১৭ শতাংশ, মধ্যম আয়ের ৪০ শতাংশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ ২১ শতাংশ এবং নিম্ন আয়ের দেশ ২২ শতাংশ। তবে বেশির ভাগ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে (৭২ শতাংশ)। বর্তমানে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক বা রোহিঙ্গা রয়েছে ১২ লাখের বেশি। তথ্য বলছে, রোহিঙ্গা শিবিরে ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ নারী-শিশু।

জাতিসংঘ ১৯৫১ সালে শরণার্থীবিষয়ক যে কনভেনশন অনুমোদন করে সেখানে ‘শরণার্থী’র সংজ্ঞা দেওয়া ছাড়াও তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার নানাদিক তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো শরণার্থীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ জোর করে এমন কোনো ভূখণ্ডে ফেরত পাঠাতে পারবে না, যেখানে তার প্রাণনাশ বা স্বাধীনতা হরণের ভয় আছে বলে সে মনে করে। আর যারা শরণার্থী, তারা নিজ দেশ ছেড়ে গিয়ে যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের যদি সেই দেশ শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে তার মৌলিক সব চাহিদাও সংশ্লিষ্ট ওই দেশকেই নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক নেতাদের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পালন করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ ও অভাবের তাড়নায় মানুষকে শরণার্থী হতে হয়। শরণার্থীদের প্রতি সবাই মানবিক হোন, সাহায্য করুন-এটাই বিশ্ব শরণার্থী দিবসের অঙ্গীকার।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ