 
              প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
 
                 
                            
              রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ চারজনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন— সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও মো. ইব্রাহিম হোসেন।
এদিকে চাঁদাবাজির এ ঘটনায় মিলেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, চাঁদাবাজির এ মিশনে পুলিশকেও ব্যবহার করেছিলেন রিয়াদ ও তার সঙ্গীরা।
পুলিশ জানায়, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় পলাতক আসামিরা আছেন—এমন তথ্য দিয়ে ১৭ জুলাই ওই বাসায় পুলিশ নিয়ে যান রিয়াদসহ কয়েকজন নেতা। তখন নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়েছিলেন তারা। তবে, সেদিন ওই বাসায় কোনো পলাতক আসামিকে না পেয়ে ফিরে যান পুলিশ সদস্যরা। তখন শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে মামলায় জড়ানো ও গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই নেতারা।
কিন্তু, এখানেই থেমে থাকেননি তারা। এরপর আরও ৪০ লাখ টাকা নিতে দুই দফায় শাম্মী আহমেদের বাসায় যান রিয়াদ ও তার সঙ্গীরা। আবার মুঠোফোনেও চাঁদা দাবি করে শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে হুমকি দেন তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, এই ছেলেরা তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য পুলিশকে ট্রাম্প কার্ড বানিয়েছে। পুলিশকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে আমরা কিন্তু যখন–তখন আপনাকে ধরিয়ে দেব। এর পরদিনই চাঁদা আদায় করে নেন তারা। এই তথ্য জানতে পেরে ঘটনাস্থলটি নজরদারিতে রাখছিল পুলিশ। সর্বশেষ গত শনিবার যখন আবার টাকা নিতে যান চাঁদাবাজরা, তখন খবর পেয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলা হয় তাদেরকে।
চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাত ৮টার দিকে গুলশান থেকে রিয়াদসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে রোববার (২৭ জুলাই) গুলশান থানায় মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জনের বাইরে কাজী গৌরব ওরফে অপু নামের একজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০–১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর উল্লেখ করেন, ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তার বাসায় প্রবেশ করেন রিয়াদ ও কাজী গৌরব ওরফে অপু। এ সময় তারা তাকে হুমকি দেন এবং একপর্যায়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা তাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন। এরপর টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়ে তার কাছে থাকা ৫ লাখ টাকার সঙ্গে ভাইয়ের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে রিয়াদ ও অপুকে দেন। এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় দফায় রিয়াদ ও অপু আবার চাঁদা নিতে আসেন। এরপর গত শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা আবার বাসায় আসেন। তারা আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। চাদার এই টাকা না দিলে তাকে (আবু জাফর) পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার ৫ জন আসামির মধ্যে রিয়াদ, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও ইব্রাহিম হোসেনকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আসামিদের মধ্যে ইব্রাহিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। অন্যদিকে সিয়াম ও সাদাব একই কমিটির সদস্য।
ঢাকার সিএমএম আদালতে রোববার গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান বলেন, রিয়াদসহ অন্যরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তারা ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশান, বারিধারাসহ অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট (নিশানা) করে চাঁদাবাজি করে আসছেন।
অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা রিয়াদের বাড়িতে উঠছে পাকা ভবন:
এদিকে চাঁদাবাজির ঘটনার মূলহোতা রিয়াদ নোয়াখালীতে তার গ্রামের বাড়িতে পাকা ভবন তৈরি করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রায় আড়াই মাস আগে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে দেওয়া হয়েছে ছাদঢালাই।
রিয়াদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুরে। সেখানকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আর্থিক অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা একজন ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ পাকা ভবন নির্মাণ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। তবে, তার পরিবারের দাবি— জমানো টাকা, অনুদান ও ঋণ নিয়ে ভবনটি করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, রিয়াদের বাবা ও বড় ভাই দুজনই রিকশা চালাতেন। এখন চালান না। রিয়াদের মা রেজিয়া বেগম জানান, মানুষের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এবং তার স্বামীর আয়ের টাকায় ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। আর পাকা ভবন নির্মাণ করছেন ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে, স্বামীর জমানো টাকা দিয়ে; ধারদেনাও করেছেন। তবে, ঋণ নেওয়ার কাগজপত্র দেখাতে পারেননি রেজিয়া বেগম।
 
 
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
      