• ঢাকা সোমবার
    ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক হাসিনা–কামালকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া কী?

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৮:৩২ পিএম

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক হাসিনা–কামালকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া কী?

সিটি নিউজ ডেস্ক

২০২৪ সালের জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত পলাতক ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে কীভাবে ফেরত আনা হবে— এমন প্রশ্নই এখন আলোচিত।

সরকারের আইন উপদেষ্টা বলছেন, ভারতে চিঠি দেওয়া হবে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতকে তাদের ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বলছেন, পলাতকদের ফেরত আনার দুটি পথ রয়েছে। এছাড়া আইনি পথও দেখিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানান চিফ প্রসিকিউটর ও আইন উপদেষ্টা। বিজ্ঞপ্তি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই— তারা যেন অনতিবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের জন্য অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও বটে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সচিবালয়ে বলেন, আমি আজকে আরেকটি কথা বলতে চাই, সেটা হচ্ছে আমরা শেখ হাসিনাকে এ দেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আবার চিঠি লিখব। ভারত যদি এই গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দেওয়া অব্যাহত রাখে, তাহলে ভারতকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটি শত্রুতা—একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় আচরণ।

যেদিন থেকে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হবেন সেদিন থেকেই সাজা কার্যকর হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাষ্ট্র আইনিভাবে যা যা করণীয়, সব করবে।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সরকার ও রাষ্ট্র আদালতের এ রায়কে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে, যারা পলাতক আসামি হিসেবে দেশের বাইরে আছেন, তাদেরকে বাংলাদেশের মাটিতে এনে আইনের মাধ্যমে শাস্তি কার্যকর করবেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র দুইভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে— এক: ২০১৩ সালে ভারতের সঙ্গে করা বহিঃসমর্পণ চুক্তি। যেহেতু রায় হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত চাইতে পারে। ভারত সরকার যদি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তাহলে তারা আসামিদের ফেরত দেবে। দুই: ইন্টারপোলের মাধ্যমে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

গত ২৩ অক্টোবর শুনানি শেষে হাসিনা-কামাল ও সাবেক আইজিপি মামুনের রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন রাখা হয়। ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ঠিক করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামীম।

পলাতক দুই আসামি হাসিনা–কামালের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্র-নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

এর আগে গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে যে আবেদন করেছিলেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ