• ঢাকা বুধবার
    ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২

মা ঋণ নিলে যোগাযোগ করবেন, আঘাত দিলে ক্ষমাপ্রার্থী: তারেক রহমান

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

মা ঋণ নিলে যোগাযোগ করবেন, আঘাত দিলে ক্ষমাপ্রার্থী: তারেক রহমান

সিটি নিউজ ডেস্ক

জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বেলা পৌনে তিনটার দিকে পৌঁছায় খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী গাড়ি। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন গাড়ি থেকে নামিয়ে রাখা হয় জানাজাস্থলে বানানো অস্থায়ী মঞ্চে। সামনের সারিতে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন ছেলে তারেক রহমান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং সরকার ও রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

জানাজা শুরুর আগে খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে সংক্ষেপে বর্ণনা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তুলে ধরেন আপসহীন এই নেত্রীর রাজনৈতিক, পারিবারিক ও সংগ্রামী জীবনের কথা। শুরুতেই নজরুল ইসলাম বলেন, বেগম জিয়া খুব পরিপাটি থাকতে পছন্দ করতেন। ফুলের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ অনুরাগ। এ কারণে তাঁর বিভিন্ন সমাবেশ থাকতো সুশোভিত।

নজরুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, ১৯৬০ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবন্ধ হন খালেদা জিয়া। তাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আরেক পুত্র আরাফাত রহমান আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৫ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে প্রকৃতপক্ষে বিনা চিকিৎসায় মারা যান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, ১৯৮১ সালের ৩০ মে কতিপয় বিপথগামী সেনাদের হাতে জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণের পর দলের মনোবল ভেঙে পড়ে। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম জিয়া রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি দলের ভাইস চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এরপর দলীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ৪১ বছরই বিএনপির শীর্ষ নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯৯১ সালে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। মানুষের কাছে থেকে পান আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা।

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়াকে তাঁর জীবনের শেষ অবধি কেউ আপসে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি থেকেছেন জনগণের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। তিনি জনগণের ভালোবাসায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনবার।

নজরুল ইসলাম খানের পর জানাজায় উপস্থিত লাখো মানুষের উদ্দেশে কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার মা মরহুমা বেগম খালেদা জিয়া জীবত থাকা অবস্থায় যদি কারও কাছে থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করব। একই সঙ্গে উনি জীবিত থাকা অবস্থায় ওনার কোনো ব্যবহারে, কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে মরহুমার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। দোয়া করবেন, আল্লাহ যাতে তাঁকে বেহেশত দান করেন।’

তারেক রহমানের বক্তব্যের পর বিকেল ৩টার দিকে জানাজা শুরু হয়। জানাজা পড়ান জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। এরপর খালেদা জিয়ার মরদেহ বহনকারী গাড়ি রওনা হয় জিয়া উদ্যানের দিকে। সেখানে স্বামীর কবরের পাশে দাফন করা হবে।

আর্কাইভ