প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ০৪:৫৩ এএম
স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প
ধীরে ধীরে সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে। আর মাত্র ৮০টি কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হলেই যানবাহন
চলাচলের পথ সম্পন্ন হবে। আগস্টের শেষ দিকেই তা শেষ হওয়ার কথা। এরপর চাইলে এপার-ওপার
হেঁটেই যাতায়াত করা যাবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে,
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৪ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে
৮৭ শতাংশ। আগামী জুনে কাজ শেষ করার সময়সীমা ঠিক করা আছে। তবে মূল সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) আগামী এপ্রিলের মধ্যেই কাজ শেষ করার
পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের
কাজের শুরুতেই পদ্মা সেতুর মালামাল রাখা, সরঞ্জাম তৈরি ও কর্মীদের থাকার জন্য মাওয়া
প্রান্তে বিরাট নির্মাণমাঠ তৈরি করা হয়। এই মাঠে বড় তিনটি ও ছোট আরও ২৫টির মতো ছাউনি
আছে। ইতোমধ্যে অদরকারি ছিউনি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বেশ কিছু ছাউনিতে এখন রেলপথে হাঁটার
পথ তৈরি ও গ্যাস পাইপলাইন বসানোর মালামাল তৈরি হচ্ছে। এরপর সেটিও ভেঙে ফেলা হবে। দিন
দিন শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যাও কমতে থাকবে। তখন হয়তো থাকার জায়গাও ভেঙে ফেলা হবে আস্তে
আস্তে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক মো.
শফিকুল ইসলাম বলেন, আস্তে আস্তে মিলনমেলা ভেঙে যাবে। সব বড় প্রকল্পেই কাজের শুরুতে
নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। শেষের দিকে লোকবল কমতে থাকে। গোটাতে হয় সব। তখন এর সঙ্গে যুক্ত
কর্মীদের মন খারাপ হয়। আগস্টে স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হলে কর্মী কমে যাবে। আস্তে আস্তে
নির্মাণমাঠের অবকাঠামোও সরানো হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু
দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ওপর দিয়ে চলাচল করবে যানবাহন। এর মধ্যে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক
১৫ কিলোমিটার। ২ হাজার ৯১৭টি কংক্রিটের স্ল্যাব জোড়া দিয়ে এই পথ নির্মাণ করা হচ্ছে।
আর ৮০টি স্ল্যাব বসালেই এই কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া মূল সেতু থেকে মাটি পর্যন্ত দুই প্রান্তে
উড়াল সড়ক (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার।
জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে আগেই। ঈদুল আজহার দিন মাওয়া প্রান্তে
সর্বশেষ স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এখন মূল সেতুর বাকি স্ল্যাব বসানো হলে পুরো ১০ কিলোমিটার
চালু হয়ে যাবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়,
স্ল্যাব বসানোর পাশাপাশি এখন সড়ক বিভাজক ও পাশের প্রতিরক্ষা দেয়াল (প্যারাপেট ওয়াল)
বসানোর কাজ চলছে। এসব কাজ শেষে শুরু হবে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। গত ১৩ জুলাই ৬০ মিটার এলাকায়
পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) পিচঢালাই করা হয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে শুরু হবে সেতুর পিচ
ঢালাইয়ের কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কংক্রিটের পথের ওপর প্রথমে ২ মিলিমিটারের পানিনিরোধক
একটি স্তর বসানো হবে, যা ওয়াটারপ্রুফ মেমব্রেন নামে পরিচিত। এটি অনেকটা প্লাস্টিকের
আচ্ছাদনের মতো। তারপর পাথর, সিমেন্ট ও বিটুমিন দিয়ে কয়েক স্তরের পিচঢালাই হবে। এর পুরুত্ব
হবে প্রায় ১০০ মিলিমিটার।
সেতুর নিচতলা দিয়ে চলবে ট্রেন।
গত ২০ জুন ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে মূল সেতুতে রেলপথ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
ওই পথে এখন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হাঁটার পথ ও গ্যাস পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। মূল সেতু
থেকে উড়াল রেলপথ (ভায়াডাক্ট) জাজিরা প্রান্তে শেষ হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে অল্প কিছু
বাকি আছে।
তরিকুল