• ঢাকা শুক্রবার
    ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত যশোরবাসী, নজিরবিহীন নিরাপত্তা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০৩:৫২ এএম

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত যশোরবাসী, নজিরবিহীন নিরাপত্তা

যশোর প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত যশোরবাসী। তার আগমন ঘিরে জেলায় এখন সাজ সাজ রব। বিশেষ করে গোটা শহরকে সমাবেশস্থলে পরিণত করার প্রস্তুতি চলছে। সেই লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর তার আগমন উপলক্ষে শুধু যশোর নয়, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জনসভা সফল করতে যশোর শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে প্রস্তুত করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সেই সঙ্গে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। প্রতিদিনই বের করা হচ্ছে প্রচার মিছিল এবং চলছে দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মিসভা ও প্রস্তুতি সভা। নেতাকর্মীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রীর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করবে।

শার্শা উপজেলার নাভারনের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ কর্মী সোহরাব হোসেন যশোর শহরে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নজিরবিহীন প্রচার-প্রচারণা চলছে। গ্রামের পথে পথে চলছে মাইকিং। নেতাকর্মীরা স্থানীয় বাজারঘাট এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়েও জনসভায় আসার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণসহ দেশে অনেক বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। অনেক বড় বড় প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। দেশ বিনির্মাণে ইতোপূর্বে যেসব সরকার গঠন হয়েছে তার মধ্যে এ সরকারের অবদান অনেক বেশি। ফলে তার আগমনে মানুষ ব্যাপক হারে সাড়া দেবে। আমরাও নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, জনসভায় পাঁচ লাখের বেশি জনসমাগম হবে। গোটা শহরে সেদিন পা রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না। জেলা ছাড়াও খুলনা বিভাগের সবকটি জেলা ও গোপালগঞ্জ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন। সেক্ষেত্রে তিন হাজারের বেশি যানবাহন ব্যবহার হবে।

তিনি আরও বলেন, জননেত্রীর জনসভা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে ৪শ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সমাবেশস্থল, সমাবেশস্থলের প্রবেশমুখ ও জনসভায় আগতদের সহযোগিতা করতে শহরের প্রবেশমুখে থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন জেলার সর্বস্তরের জনগণ। উচ্ছ্বাস-আনন্দে ভাসছেন তারা। শহরের আশ্রম রোডের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ‘জনসভার দিন মাঠের আশপাশে থাকব। তিনি উন্নয়নের রাজনীতি করেন। দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আয় রোজগারও বেড়েছে। আমারও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই আছি।’

শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজারের মুদি দোকানি ফারুক পারভেজ বলেন, ‘বহুদিন পর প্রধানমন্ত্রী যশোরে আসছেন। তাকে দেখতে বহু মানুষ যাবে; তার বক্তব্য শুনবে। আমিও যাব। আসলে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে দেশে উন্নয়ন হয়। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের অনেক উপকার হয়। তার বিকল্প নেই। আমরা আগামীতেও তাকে চাই।’

কৃষিশ্রমিক তাহাজ্জেত আলীর সঙ্গে কথা হয় জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনের পাশের চা দোকানে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভালোবাসি। তার কথা শুনতে, তাকে একনজর দেখতে জনসভায় যাব। কারণ তিনি এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও জীবনযাত্রার উন্নয়ন করেছেন।’

শহরের মুজিব সড়কে কথা হয় রিকশাচালক আলতাফ হোসেন ও ইজিবাইকচালক শাহিন মল্লিকের সঙ্গে। তারা জানান, শেখ হাসিনা গরিব মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন। ১৫ টাকা দরে চাল, ১৮ টাকা দরে আটা ছাড়াও টিসিবির মাধ্যমে ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ছোলা কম দামে কেনার ব্যবস্থা করেছেন। তাকে দেখতে, তার কথা শুনতে জনসভায় যাব।

মোয়াজ্জেম হোসেন মুকুল নামে এক চাকরিজীবী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বহু উন্নয়ন সাধন করেছেন। যশোর তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য তিনি অনেক কিছুই করেছেন। তিনি ক্ষমতায় থাকলে সাধারণ মানুষ কিছু পায়; তিনি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা ভাবেন, তাদের জন্য কাজ করেন। তার কাছে চাইলে খালি হাতে ফিরতে হয় না। সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই তার জনসভায় সাধারণ মানুষের স্রোত নামবে।

এছাড়া শেখ হাসিনার এ সফরকে ঘিরে নানা প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন যশোরের মানুষ। নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়কারী মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যশোরবাসীর অনেক প্রত্যাশা। তিনি এর আগে জনসভায় যশোরকে সিটি করপোরেশন করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষা যশোর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হবে, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫শ শয্যা হবে, ভবদহয়ের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে, ভৈরব নদ পূর্ণাঙ্গ খননের মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে আনা হবে এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা হবে। এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন-এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার মানুষের। আমরা জনদাবিগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী যশোরবাসীকে নিরাশ করবেন না।

এদিকে শেখ হাসিনার সফরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করেই জনসভাস্থলে আসতে হবে দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষকে।

সবশেষ পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

আইএ/

আর্কাইভ