• ঢাকা শনিবার
    ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সৈয়দপুরে মুক্তিযোদ্ধার কৃষি জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২, ০৩:০৯ এএম

সৈয়দপুরে মুক্তিযোদ্ধার কৃষি জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প!

নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পৈতৃক কৃষি জমি জবরদখলে নিয়ে আশ্রয়ণ- প্রকল্পের গৃহ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুর চড়কপাড়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান খাঁনের পরিবারের সদস্যরা।

মুক্তিযোদ্ধার পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য মো. লুৎফর রহমান খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, সিএস ১৯৮, এসএ ২২৫ বিএস ৯০৭ খতিয়ানে এবং সিএস ১৫৩, এসএ ১৫৩ বিএস ২৬৭ দাগে তাদের একর ২২ শতক পৈতৃক আবাদি জমি রয়েছে। তারা বংশ পরস্পরায় ওই জমি চাষাবাদ করে আসছিলেন। ২০১৩ সালে তারা স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে তৎকালীন তহশিলদার ওই জমি সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি উল্লেখ্য করে খাজনা গ্রহণে অসম্মতি জানায়।

পরবর্তীতে তিনি তার পৈতৃক জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্তির জন্য একই বছরের জানুয়ারি তৎকালীণ নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) তফশীল বর্নিত সম্পত্তি বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সে সময় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সম্পত্তির কাগজপত্র, ভলিউম দখল বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক গত ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদনে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, উল্লিখিত খতিয়ানে দাগের একর ২২ শতক জমি পরিত্যক্ত কিংবা খাস নয় এবং জমি পরিত্যক্ত তালিকা থেকে অবমুক্তির জন্য আবেদনকারীর দখলে রয়েছে। কিন্তু তারপরও উল্লিখিত পরিমাণ জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্তি নাহওয়ার জমির মালিক আদালতের শরনাপন্ন হন। তিনি জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। যার নং-৯৪/১৪। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে।


জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এরমধ্যেই গত জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ- প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণকাজ শুরু করেছে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে লুৎফর রহমান তার জমিতে সরকারি বাড়ি নির্মাণ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চান। সময়  সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয় সরকারি খাস জমিতে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাঁধা দিলে তার অনেক ক্ষতি হবে। মামলায় জড়িয়ে জেল খাটতে হবে বলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে নানা রকম হুমকি প্রদর্শন করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘পৈতৃক ওই জমিতে চলতি ইরি-রোবো ধানের চারা রোপনের সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ওই জমিটি পরিত্যক্ত খাস দেখিয়ে সেখানে গৃহ নির্মাণকাজ শুরু করায় জমিতে লাগানো ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করতে ব্যর্থ হন।’

তিনি বলেন, ‘ওই আবাদি জমিটুকুই তাদের সম্বল। ওই জমিতে উৎপাদিত ফসল দিয়ে তাদের দুবেলা-দুমুঠো ভাত খেতে পারেন। কিন্তু ইরি-বোরো চারা রোপন করতে না পারায় তারা আগামী পরিবারে সদস্যদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অবস্থায় তারা পৈতৃক জমিতে আশ্রয়ণ- প্রকল্পের গৃহ নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান খানের পরিবারের সদস্য মো. জাকির হোসেন, মো. মমিস খান, বখতিয়ার খান, নায়েব আলী খান, মঈনুল খান, আইয়ুব খান, শাহীন খান উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান জানান, যেখানে আশ্রয়ণ- প্রকল্পের গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা। আমি গত বছরের ১৬ নভেম্বর দাফতরিকভাবে সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকা থেকে এক নম্বর খাস তালিকায় তা অন্তর্ভুক্তির জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে প্রস্তাব প্রেরণ করেছি।

এএমকে

আর্কাইভ