• ঢাকা শুক্রবার
    ০২ মে, ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বাঁধ পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২২, ০১:৪৪ এএম

সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বাঁধ পানিতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা

শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা প্রতিনিধি

শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেরিবাঁধের কাজ শেষ  হওয়ার আগেই এর সিসি ব্লক নদীতে ধসে পড়ছে। ৬২ কিলোমিটার বেরি বাঁধের ৭-৮ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সিসি ব্লক দেওয়া হয়নি। নদী শাসন না করায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার এই বাঁধ পানিতে ভেসে যাবে বলে আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ তিন বছর মেয়াদী বাধঁ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছয় বছরে গড়িয়েছে।গামী ৩০ জুন এই কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে

সরেজমিনে বেরিবাঁধে গিয়ে দেখা যায়, সাউথখালী ইউনিয়নের গাবতলা, দক্ষিণ সাউথখালী, উত্তর সাউথখালী, বাবলাতলা, রায়েন্দাতাফালবাড়ী এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর পয়েন্টে বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মিত বেরিবাঁধের সিসি ব্লক খসে খসে পড়ছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ সাউথখালী  (গাবতলা) ওয়ার্ডের মেম্বার জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, বলেশ্বর নদীর তীরে নির্মীত নতুন ওয়াপদা বেরি বাঁধের সিসি ব্লক ধসে নদীতে পড়ছে। মাঝে মাঝে বাঁধে ফাটল দেখা দিলে ঠিকাদারের লোকজন এসে কোনো রকমে ফাটল মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে যায়। বাঁধ নির্মাণে  অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে মাটির বদলে বাঁধে বেশিরভাগ বালি ব্যবহার করা হয়েছে এবং নদী শাসন না করায় বাঁধে ফাটল দেখা দেয় বলে ওই মেম্বার জানিয়েছেন।

গাবতলা এলাকার সাবেক মেম্বার মোশারেফ হোসেন, গ্রামবাসী হাফেজ কাজী, খালেক হাওলাদার, আসাদ খান, আসাদুল খান ও তরিকুল ইসলামসহ অনেক গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, বেরিবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি করায় বাঁধ টেকসই হয়নি তা ছাড়া নদী শাসন না হওয়ায় শত শত কোটি টাকার বেরিবাঁধ মানুষের কাজে আসবে না তা বলেশ্বর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘গাবতলাসহ বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে মাঝে মাঝে ফাটল ও দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। বলেশ্বর নদী শাসন ছাড়াই শত শত কোটি টাকা ব্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মীত বেরিবাঁধ ব্লকসহ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে চেয়ারম্যান আশঙ্কা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘শরণখোলার রায়েন্দাতাফালবাড়ী, মোরেলগঞ্জের কুমারখালী, সন্যাসী ও আমতলী পয়েন্টের ৭/৮ কিলোমিটার জায়গা বেরিবাঁধে কোনো সিসি ব্লক দেওয়া হয়নি ফলে ওই এলাকায় বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জের ৩৫/১ পোল্ডারে ৬২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য টেকসই বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়। তিন বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। চীনের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ করছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন শরণখোলার গাবতলাসহ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বেরিবাঁধ পরিদর্শ করে বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব বলেশ্বর নদী শাসন ও অপরিকল্পিত স্লুসগেট সংস্কারসহ নতুন স্লুসগেট করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপকূলীয় বেরিবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের (সি ই আই পি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘শরণখোলায় বেরিবাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ার খবর তার জানা নেই বিষয়টি খোঁজ নেবেন, প্রয়োজনে নতুন ব্লক বসাবেন। এক বছর আগে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা বলেশ্বর নদী শাসন প্রকল্পের ফাইল অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ পেলে নদী শাসনের কাজ শুরু করা হবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ উচ্চপর্যায়ের তৎপরতা চালানো জরুরি। করোনাসহ নানা জটিলতায় তিন বছর মেয়াদী বেরিবাঁধের কাজের মেয়াদ দুইদফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ জুন বেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে ওই নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।

 

এএমকে

 

দেশজুড়ে সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ