• ঢাকা শনিবার
    ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘন কুয়াশার ফাঁদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২২, ০৭:২৮ পিএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘন কুয়াশার ফাঁদ

কুমিল্লা প্রতিনিধি

গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ শেষ করে, শীতের আনাগোনা শুরু হয়েছে আমাদের দেশে। দেশের উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলোর মতো কুমিল্লায়ও জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। তীব্র শীতের পাশাপাশি বেড়েই চলেছে ঘন কুয়াশার আধিপত্য। গত কয়েকদিন ধরেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহের ফলে কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়কগুলোও।

বুধবার ও কুমিল্লায় খুব একটা দেখা মেলেনি সূর্যের। খানিক উঁকি মেরেই আবার যেন হারিয়ে যাচ্ছিল। গতকাল (২০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবারেও সূর্যের মুখ দেখা যায় নি। এ দিন বিকেল থেকেই কুয়াশার চাঁদরে ঢাকতে শুরু করে পুরো জেলা। গত বুধবার থেকেই বেড়েই চলেছে ঘন কুয়াশার তীব্রতা। সন্ধ্যার পর যেন সড়ক-মহাসড়কগুলোতে তীব্র কুয়াশা তৈরি করেছে দুর্ঘটনার ফাঁদ।

দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় একশো কিলোমিটার এলাকার অংশ রয়েছে কুমিল্লা জেলাজুড়ে। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে ঘন কুয়াশা যান চলাচলে বাড়িয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। যেন পরিণত হয়েছে দুর্ঘটনার ফাঁদে। ফগ লাইট ব্যবহার করেও কোথাও কোথাও সামনের পথ দেখতে পারছেন না চালকরা। তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ঘন কুয়াশায় গতি নিয়ন্ত্রণ এবং দূরত্ব বজায় রেখে কিভাবে গাড়ি চালাতে হয়, সেই নির্দেশনা এরই মধ্যে পরিবহনের চালক ও মালিকদের একাধিকবার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে। গত তিন দিনের মতো মঙ্গলবার বিকেলে ঘন কুয়াশায় মহাসড়ক ঢেকে যেতে দেখা গেছে। 

এ বিষয় হাইওয়ে পুলিশ, কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, সঠিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালালে ঘন কুয়াশায় খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। এ ছাড়া আমাদের দেশের চালকরা শীতকালে ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালাতে আগে থেকেই অভ্যস্ত। এরপর আমাদের পক্ষ থেকে পরিবহনের মালিক ও চালকদের এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরাও দিনরাত মাঠে কাজ করছেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ আরো বলেন, গত বুধবার থেকেই ঘন কুয়াশায় মহাসড়ক ঢেকে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় মহাসড়কে চলাচলরত সকল যানবাহনে ফগ লাইট ব্যবহারে গুরুত্ব দিয়ে এবং গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে গাড়ি চালাতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি গাড়িকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে। চালকদের মনে রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আমাদের সদস্যরা এসব বিষয়ে প্রতিদিনই চালকদের সতর্ক করে যাচ্ছেন।

বুধবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম থেকে কুমিল্লা সেনানিবাস পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাতের মতোই সকালেও হেড লাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। কুয়াশায় তীব্রতায় কোথাও কোথাও কোথাও ফগ লাইট ব্যবহার করেও গাড়ি চালাতে বেগ পেতে দেখা গেছে চালকদের। এ দিন ৯টার পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে কুয়াশার তীব্রতা।

এ দিন সকালে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়ারবাজার এলাকার মহাসড়ক সংলগ্ন একটি হোটেলে যাত্রাবিরতিকালে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি পরিবহনের বাস চালক আমান উল্লাহ‍‍র সঙ্গে কথা হয় এ নিয়ে। তিনি বলেন, গত দুই-তিন ধরে বাস চালাতে খুবই সতর্ক থাকতে হচ্ছে চালকদের। ফগ লাইট ব্যবহার করেও অনেক সময় সামনের গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। ৪ ঘণ্টার পথ পার হতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগছে। কিন্তু এরপরও সতকর্তার সঙ্গে গাড়ি চালাচ্ছি।

কালু মিয়া নামে এক ট্রাক চালক বলেন, ঘন কুয়াশায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হলেও কাঁচামাল নিয়ে বের হতে হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের যেসব এলাকায় হাট-বাজার নেই, সেসব স্থানে কুয়াশার তীব্রতা অনেক বেশি। এ ছাড়া মহাসড়কের বাঁক ও লিংক রোডগুলো পার হওয়ার সময়ও অধিক সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

মাইনউদ্দিন নামে এক মাইক্রোবাস চালক বলেন, এমন কুয়াশা গত বছরও দেখা গেছে। বলতে গেলে কুয়াশার তীব্রতায় অর্ধেক গতিতেও গাড়ি চালানো যাচ্ছে না মহাসড়কে। কোন কোন এলাকায় সড়ক ফাঁকা থাকলেও ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।

 

সজিব/এএল

আর্কাইভ