• ঢাকা শনিবার
    ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পরিবেশ রক্ষায় ১৫ হাজার কিমি পথ হেঁটে ভারতীয় যুবক এখন নওগাঁয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ১০:০৭ পিএম

পরিবেশ রক্ষায় ১৫ হাজার কিমি পথ হেঁটে ভারতীয় যুবক এখন নওগাঁয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

পরিবেশ রক্ষার আহ্বান নিয়ে ও সচেতনতা তৈরিতে ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে এখন নওগাঁয় ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের রোহান আগরওয়াল। তিনি গত বছরের ৮ অক্টোবর ফেনী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ইতোমধ্যে ঘুরেছেন ৩১ জেলায়। বাংলাদেশ থেকে গিয়ে বিশ্বের আরও ১৫টি দেশে যেতে চান গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রোহান। হেঁটে হেঁটে ভারতের ২৭টি রাজ্য ঘুরে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।  

জানা যায়, ২ বছর আগে এই যাত্রা যখন শুরু করেন তখন রোহানের বয়স ছিল ১৮ বছর। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গার তীর থেকে শুরু হয় তার হাঁটা। সেখান থেকে রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চণ্ডিগড়, হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরি, কর্ণাটক, কেরালা ও গোয়া হয়ে ভারতের মোট ২৭টি রাজ্য পরিভ্রমণ শেষে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।

গত ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢোকেন এই যুবক। তারপর পৌঁছান চট্টগ্রাম। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন রোহান। পথ চলতে চলতেই তার পরিচয় বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে। পথের পরিচিত হওয়া মানুষেরাই রোহানকে সহযোগিতা করেছেন, খরচ, খাবার, থাকার ব্যবস্থা করে। 

dhakapost

বর্তমানে নওগাঁয় আছেন রোহান। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে হেঁটে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে কথা হয়। ঢাকা পোস্টকে রোহান জানান, নাগপুরে থাকে তার পরিবার। তার বাবা-মা ও ছোট বোন আছেন। পরিবেশ থেকে খাদ্য, পানি, বায়ু পেয়ে থাকি আমরা। অথচ এর বিনিময়ে আমাদের অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে এবং অতিরিক্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহারে পরিবেশ আজকে ভয়ংকর ক্ষতির মুখে। তাই পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা দিতে মানুষকে সচেতন করতে, বিশেষ করে তরুণদেরকে সচেতন করতে আমি এই ভ্রমণ শুরু করেছি। 

রোহান আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম যদি তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন হয়, তাহলে অনেক কিছু বদলে যাবে। তাই আমি বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করি। 

dhakapost

তিনি বলেন, এ পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়। সব প্রাণী ও উদ্ভিদেরও। তাই পরিবেশের বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এটা সব মানুষের দায়িত্ব। যেখানেই গিয়েছি, সেখানকার স্কুল-কলেজে গিয়েছি, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে গিয়েছি। সবাইকে বলেছি পরিবেশ রক্ষার জন্য। ৯৯ শতাংশ মানুষই ভালো। কেউ কোনোদিন জানতে চায়নি, আমি কোনো ধর্মের। মানুষ হিসেবে সবাই হেল্প করেছে।

প্লাস্টিক পণ্যে বেশি কর আরোপ এবং বিকল্প পণ্যগুলোতে বাজার সুবিধা দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রোহান বলেন, প্লাস্টিক অন্যতম দূষণের কারণ। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, কৃষক বা ব্যবসায়ী সবাই প্লাস্টিক ব্যবহার করে। মানুষকে বোঝাতে চাই কীভাবে পরিবেশের সুরক্ষা করা যায়। প্লাস্টিক বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু রিইউজ এবং রিসাইক্লিং করে পলিথিনের ব্যবহার কমানো যাবে। প্লাস্টিক পণ্যে বেশি কর আরোপ করে বিকল্প পণ্যকে বাজার সুবিধা দিতে হবে।

রোহান আগরওয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৮৭ দিন সফর করেছি ৩১টি জেলায়। যেখানেই গেছি, সেখানকার মানুষ আলাদাভাবে অনেক সহযোগিতা করেছে। প্রথমদিকে যখন আসি তখন এখানকার মানুষের ভাষা বুঝতে পারতাম না, কিন্তু এখন অল্প অল্প বুঝি। ধীরে ধীরে বাংলা ভাষা শিখছি। ভাষা কখনও যোগাযোগের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেনি। কথা বলতে মনের ভাব বুঝাতে কোনো সমস্যা হয়নি। এখানকার সবাই খুব বন্ধুভাবপন্ন মানসিকতার। 

dhakapost

৮০০ দিনের এই যাত্রায় এ পর্যন্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছেন দাবি করে রোহান জানান, এর পুরোটাই হেঁটে কিংবা অন্য কারও গাড়িতে লিফট নিয়ে চলেছেন তিনি। আমার কোনো স্পন্সর নেই। ভারতে অনেকে আমাকে সহযোগিতা করেছে। যাদের সঙ্গে দেখা করেছি ৫০০ থেকে ১০ হাজার রুপি পর্যন্ত অনেকে দিয়েছে। এ যাত্রা আমার নয়, এ যাত্রা সবার।

বাংলাদেশের পর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছা রোহানের। এ নিয়ে তিনি বলেন, সাইবেরিয়ার ওমিয়াকম নামের স্থানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়। এভাবে ‘ওয়াক অ্যান্ড লিফট’ উপায়ে ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার কেউ এখনও সেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার অঞ্চলে পৌঁছাতে পারেনি। আমি সেখানে যেতে চাই। এই যাত্রায় আমি ৫০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করতে চাই। পরিবেশ সংরক্ষণ করা না গেলে এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আমরা প্রকৃতি থেকে এসেছি এবং আবার প্রকৃতিতেই মিশে যাব। এটাই মানব জীবনের যাত্রা।

আর্কাইভ