• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাবার চেয়ে এক বছরের বড় ছেলে!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০১:০৮ এএম

বাবার চেয়ে এক বছরের বড় ছেলে!

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো

বাবার বয়স ৪৬ আর ছেলের ৪৭। অর্থাৎ বাবার চেয়ে ছেলে এক বছরের বড়। বাস্তবে না হলেও বান্দরবানের এক রোহিঙ্গা নাগরিক চট্টগ্রামে জালিয়াতি করে এনআইডি করায় এমন গরমিল ধরা পড়ে। তার এনআইডি, চেয়ারম্যান সনদ, পাসপোর্ট ও জায়গা কেনা সবই কাগজপত্র জালিয়াতি করে।

ওই রোহিঙ্গা নাগরিকের নাম হামিদ হোসাইন। তিনি বান্দরবানের লামার আজিজ নগরে একটি বাড়িতে থাকেন। অথচ তার এনআইডি চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের ঠিকানায়। যেখানে বাবা দেখানো লামার বাসিন্দা ওসমান গনির জন্ম ১৯৭৬ সালে। ছেলে হামিদের জন্ম ১৯৭৫ এ। অর্থাৎ ছেলের বয়স এক বছর বেশি। ২০১৮ সালে মিথ্যা তথ্য ও কারসাজি করে এ অসঙ্গতিপূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্র করেন হামিদ আবছার।

লামার স্থানীয় বাসিন্দারা  জানান, রোহিঙ্গা হামিদ বিভিন্ন সময় জায়গা কিনেছে। সেই কাগজপত্র জাল করে সবকিছু করছেন লামায়।

এনআইডির সত্যতা নিশ্চিত করতে সিটি নিউজ ঢাকার প্রতিবেদক চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার কাউন্সিলর অফিসে যান। যেখানে অনলাইনে যাচাইয়ের পদ্ধতি না থাকলেও সত্যতা নিশ্চিত হয় মোবাইলে স্ক্যান করে।

এদিকে হামিদের এনআইডিতে বাবার নাম ভুয়া দেখানোয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে সনদটি বাতিল চেয়ে আবেদনও করে বাবা দেখানো ওসমান গনি। যেখানে সহায়তায়কারী হিসেবে দেখানো হয় প্রভাবশালী মৃদুল কান্তি দাশকে।

ওসমান গনির ছেলে হান্নান জানান, আমার বাবার ভুয়া নাম দিয়ে এনআইডি করেছেন। আমরা প্রশাসনকে সেটি জানিয়েছি।

এখানেই শেষ নয়। ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা হামিদ ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বেশকিছু জমি কেনেন লামার ছালাম ও নুরুল কবিরসহ কয়েক জনের কাছ থেকে। পাহাড়ে জমি কিনতে বোমাং রাজার সার্টিফিকেট লাগলেও সেটিও করা হয় নকল। পরে কেনা সেই জায়গার ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়  প্রভাবশালী মৃদুল কান্তির দাশের কাছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও কাগজপত্র জালিয়াতি পেছনে থাকে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী। হামিদের ক্ষেত্রে ছিল আজিজ নগর ইউনিয়নের কৃষকলীগের সভাপতি সেই মৃদুল কান্তি দাশ। তিন তলা বাড়ি থাকার পর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে তার বিরুদ্ধে ঘর নেয়ার অভিযোগ আছে।

লামা আজিজ নগর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি মৃদুল কান্তি দাশ জানান, আমি এসবের কিছুই জানিনা। সবাই আমাকে ফাঁসাতে এটি করছে।

এদিকে প্রশাসনের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা বিদেশ পাড়ি দেয়ায় জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বহির্বিশ্বে। তবে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার কথা জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমরা তাদের নানাভাবে পরীক্ষা করি তারা যেন জালিয়াতি করে এনআইডি বানাতে না পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী জানান, এনআইডি জালিয়াতিতে প্রশাসনের হাত রয়েছে। প্রশাসন কঠোর হলে কোনোভাবেই এটি করাতে পারে না।

ভুয়া কাগজপত্রে পাসপোর্ট বানিয়ে হামিদ বর্তমানে সৌদি আরবের মক্কায়। তার মতো  হাজারো রোহিঙ্গা সব কাগজপত্র জালিয়াতি করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে অবস্থান করছে।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ