• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২৪ জুন, ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

সুন্দরগঞ্জে জামায়াত নেতার নেতৃত্বে আদালতের আদেশ অমান্য করে ঘর নির্মাণ

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম

সুন্দরগঞ্জে জামায়াত নেতার নেতৃত্বে আদালতের আদেশ অমান্য করে ঘর নির্মাণ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার নেতৃত্বে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধপূর্ণ জমিতে ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের সীচা গ্রামের পালপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এতে এলাকায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং যে কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে সূত্রে জানা যায়, মৃত যতীন্দ্রনাথ পালের ছেলে চৈতন্য কুমার পালের সঙ্গে মৃত যাদব চন্দ্র পালের ছেলে হরনাল চন্দ্র পালের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি।

পরবর্তীতে হরনাল চন্দ্র পাল গাইবান্ধার বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি পিটিশন মামলা (নং-২১৭/২৪) দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত উভয়পক্ষকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে জমি ভোগদখল বজায় রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে কোনো পক্ষ যেন অপরপক্ষের দখলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে—তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে সতর্ক করে দেয়।

গত ১৬ জুন সকালে আদালতের এই নির্দেশ অমান্য করে চন্ডিপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি রঞ্জু মিয়ার সরাসরি নেতৃত্বে এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি আব্দুস ছালামসহ আরও কয়েকজন নেতার সহায়তায় বিরোধপূর্ণ জমিতে কংক্রিটের পিলার বসিয়ে গ্রেডবিম ঢালাইয়ের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় ঘর নির্মাণের ঘটনাটি এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের এই জমি বিরোধের বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একপক্ষ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে ক্ষমতার জোরে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাত বাধার আশঙ্কাও রয়েছে।

ভুক্তভোগী চৈতন্য কুমার পাল বলেন, ‘আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও চন্ডিপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি রঞ্জু মিয়া ও ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি আব্দুস ছালামসহ তাদের অনুসারীরা হরনাল চন্দ্র পালের পক্ষে বেআইনিভাবে আমাদের জমিতে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের আদেশকে অগ্রাহ্য করে তারা প্রকাশ্যেই জমি দখল করেছেন। এমনকি আমাদেরকে নানা ধরনের হুমকি-ধামকিও দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আমরা পরিবারের সবাই চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।’

নির্মাণকাজে সহায়তা পাওয়া হরনাল চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তিতে ঘর তুলছি। কাগজপত্র আমার পক্ষে রয়েছে বলেই জামায়াত নেতারা আমাকে সহায়তা করছেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী আমি কারও দখলে বিঘ্ন ঘটাইনি।’

প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ অস্বীকার করে চন্ডিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি আব্দুস ছালাম বলেন, ‍‍`দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি নিয়ে দু‍‍`পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আমরা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে হরনাল চন্দ্র পালকে ঘর নির্মাণে সহায়তা করেছি। আমরা যা করেছি, তা সঠিক। ওইদিন ঘটনাস্থলে এলাকার অনেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।‍‍`

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্ডিপুর ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি রঞ্জু মিয়া সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তিনি উত্তেজিত ভাষায় বলেন, ‘আপনি যা শুনেছেন তাই লেখেন। মিথ্যার আশ্রয় নিলে আমরা একশনে যাব। আপনার যা মনে চায় তাই করেন, তবে পরবর্তীতে যদি মিথ্যা কিছু ফলপ্রসূ করার চেষ্টা করেন, আমরাও পদক্ষেপ নিব ইনশাআল্লাহ।’

এবিষয়ে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আতাউর রহমান বলেন, ‍‍`বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।‍‍`

সুন্দরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম রেজা বলেন, ‘আদালতে মামলা চলমান থাকাকালে বিরোধপূর্ণ জমিতে স্থাপনা নির্মাণ আদালত অবমাননার শামিল। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
 

আর্কাইভ