• ঢাকা শুক্রবার
    ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেবে বুয়েটের ‘অক্সিজেট’

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২১, ০৫:৪৫ পিএম

মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন দেবে বুয়েটের ‘অক্সিজেট’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

করোনায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। প্রতিরোধের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের কার্যকর চিকিৎসাসেবা দিতে বিশ্বজুড়েই উদ্ভাবিত হচ্ছে নিত্যনতুন যন্ত্রের। পিছিয়ে নেই দেশের উদ্ভাবকরাও।

করোনা রোগীকে আর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে (আইসিইউ) যেতে হবে না। হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যাবে; এমন ভাবনা থেকেই বেশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য নতুন এক মেডিকেল কিট উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল গবেষক।

দুই ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত এই গবেষক দলটি আছেন তৃতীয় ধাপে। পরীক্ষায় সফলতা এলে এটি হতে পারে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিকল্প।

হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেয়া হয়। তাতেও কাজ না হলে বিদ্যুৎচালিত হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬০ লিটার অক্সিজেন দেয়া হয়। যা এইচডিইউ এবং আইসিইউতে ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে বুয়েটের একদল শিক্ষক শিক্ষার্থী কাজে লেগে যান।

সাধারণ ওয়ার্ডের রোগীদের বেশিমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করতে উদ্ভাবন করেনঅক্সিজেটনামের ছোট একটি সিপ্যাপ। যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ছাড়াই সিলিন্ডার অথবা সাপ্লাই লাইনে সংযুক্ত করে বাইরের বাতাস টেনে অক্সিজেনের প্রবাহ মিনিটে ৬০ লিটার পর্যন্ত করা সম্ভব।

বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক . তৌফিক হাসান বলেন, হাই প্রেসারে অক্সিজেন যখন দেয়া হয়, এখানে হাই ভেলোসিটিতে অক্সিজেনকে ইনজেক্ট করে। তাতে একটি লো প্রেসার তৈরি হয়। এটি পরিবেশ থেকে বাতাস পুল করে মিক্সড করে আউটলেট দিয়ে ৬০ লিটারের একটি অক্সিজেনের এয়ার ফ্লো তৈরি করে।

তিনি আরও বলেন, সেকেন্ডারি ইনলেটে অতিরিক্ত অক্সিজেন দিয়ে আমরা যেটা করতে পারি, এই ৬০ লিটারের মধ্যে অক্সিজেনের যে ঘনত্ব সেটা শতভাগ নেয়া সম্ভব। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা - লাখ টাকার নিচে নেই, যদি ভালো কোনো ব্র্যান্ড না হয়। আর আমাদের এই ডিভাইসটা সব খরচ মিলিয়ে ২০ হাজারে হয়ে যায়।

প্রাথমিক ট্রায়ালে অক্সিজেটের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে চলছে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল। যার মাধ্যমে বোঝা যাবে এটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিকল্প হতে পারে কি না। যেসব চিকিৎসক এটির ট্রায়ালে যুক্ত তারাও বললেন সিপ্যাপটির কার্যকারিতার কথা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, এটি কিন্তু টেকনিক্যাল ব্যাপার। দামেরও একটা ব্যাপার আছে। ভবিষ্যতে যদি কোনো কারণে আমাদের দেশে করোনা মহামারি ভারত কিংবা ব্রাজিলের মতো অবস্থায় যায়। তখন বড় বড় হাসপাতালে বেড অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হবে। তখন সাধারণ মেশিনের মাধ্যমে আমরা উপজেলা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎবিহীনভাবে রোগীকে সর্বোচ্চ অক্সিজেন দিতে পারব।

অক্সিজেনকে সহজলভ্য করে তুলতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কথা চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। আলোচনা চলছে কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গেও। উদ্যোক্তাদের ইচ্ছে রয়েছে তাদের এই উদ্ভাবনের কারিগরি বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ারও।

এলআই/মেহেদী/এম. জামান

আর্কাইভ