• ঢাকা রবিবার
    ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাইডেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কেন এড়িয়ে গেলেন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ০৩:৪৯ পিএম

বাইডেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কেন এড়িয়ে গেলেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দেয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তবে বর্তমান বৈশ্বিক আলোচিত বেশকিছু ইস্যু নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি সতর্কভাবে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বার্ষিক ভাষণটি নানা কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ তিনি এবার রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন। এ ছাড়া ভাষণটি এমন একসময় দিয়েছেন, যখন আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হয়ে আরেক দফা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছেন বাইডেন। 
ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমেরিকা প্রথমে, পররাষ্ট্রনীতি শেষে।’ অর্থাৎ, পররাষ্ট্রনীতির আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই দেখবে যুক্তরাষ্ট্র।  
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, চীনের সঙ্গে নানান ইস্যুতে বৈরী সম্পর্ক সত্ত্বেও ভাষণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে গেছেন। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের ‘নজরদারি বেলুন’ ছিল বিশাল এক খবর। কিন্তু বাইডেন এ নিয়ে কেবল একটি কথাই বলেছেন। 
তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, চীন আমাদের সার্বভৌমত্বে হুমকি হলে আমরাও আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যবস্থা নেব এবং আমরা সেটাই করেছি।’ বেলুনকাণ্ড নিয়ে তার মন্তব্য ছিল এটুকুই। 
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বাইডেন যা বলেছেন, তার বেশির ভাগই ছিল গত বছরের। বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে। সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং মানবিক সংকট নিয়ে তিনি কিছু বলেননি বরং দেশের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগের বিষয়গুলোতে জোর দিয়েছেন বেশি। 
এক জরিপের তথ্য বলছে, আমেরিকান জনগণ স্বার্থ না থাকলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। তাদের মতে, অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং সংস্কৃতি যুদ্ধের সময় পররাষ্ট্রনীতি একটি অসাধ্য বিলাসিতা। এমনকি পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থের সঙ্গে জড়িত অনেকে মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি না থাকলে বৈদেশিক নীতিতে ব্যয়বহুল বিনিয়োগ অপ্রয়োজনীয়। 
আমেরিকান জনগণ বৈদেশিক নীতি নিয়ে তখনই মাথা ঘামায় যখন মার্কিন সৈন্যরা বিদেশের মাটিতে প্রাণ হারাতে শুরু করে। সম্ভবত বাইডেন এই ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এ কারণেই দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি যুদ্ধকে চিরতরে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া মধ্যবিত্তের জন্য বৈদেশিক নীতিতে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। 
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং উচ্চ জাতীয় ঋণ সম্পর্কে রিপাবলিকানদের সতর্কতা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে রুশ বাহিনীর মোকাবিলার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাহায্য করাকে অনেকে সমালোচনার চোখে দেখছেন।  
এক জনমত জরিপ অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিই মার্কিন জনগণের কাছে প্রথম অগ্রাধিকার। তারা বিশ্বাস করে, দেশ এখনও লড়াই করছে। দেশ পেছন দিকে ঘুরে দাঁড়ালেও তারা তা বিশ্বাস করবে বলে মনে হয় না। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন মার্কিনিদের মন বদলের চেষ্টা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ফের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়ালেন। মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদ্যুতের উচ্চমূল্য এখন নিম্নমুখী বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই কারণগুলোর জন্য গত ১৮ মাসে তার জনসমর্থন কমেছে। 
অনেক বিশ্লেষকের মতে, বর্তমানে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে বলার মতো খুব বেশি সাফল্য নেই। যে কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইলের দখলদারিত্ব এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্পর্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী নেতা বার্নি স্যান্ডার্সের নীতিও প্রত্যাখ্যান করেছেন বাইডেন। নেতানিয়াহুকে একজন ‘বর্ণবাদী’ বলে মনে করেন স্যান্ডার্স। তার দাবি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ভুল পথে রয়েছে। এদিকে কট্টর ডানপান্থি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তার সেরা বন্ধু হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।  
প্রায় দুই দশকের অভিযান শেষে ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক পরাজয় হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতেও বলার মতো কোনো সফলতা নেই। 
যদিও ইরাক, লিবিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সুদান ও সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বাইডেন প্রশাসন সহায়তা করেছে, তবে এটি বলার মতো কোনো অর্জন নয় বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। 
বাইডেনের প্রশাসন তার আন্তর্জাতিকতাবাদের বিষয়ে যে ধরনের নীতিকথা বলে এবং সেটিকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে যে পন্থা অবলম্বন করে থাকে, তার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।  
২০২২ সালের মাঝামাঝিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। তবে তার সেই সফর সফল হয়নি বলেই বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই সফরে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ওয়াশিংটনের নীতির ব্যর্থতা প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।  
বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে এবং বাইরের দেশে পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের ভাবমূর্তির দূরত্ব দেখানোর জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার পররাষ্ট্রনীতিকে গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্রভিত্তিক দেখানোর চেষ্টা করছেন।
বাইডেন তার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শুরু এবং শেষ করেছেন এই উচ্চ ধারণা দিয়ে যে, ‘আমেরিকা সম্ভাবনার দেশ। এটি একটি চমৎকার এবং আকর্ষণীয় স্লোগান, যা দেশকে বড় স্বপ্ন দেখতে এবং আক্ষরিক অর্থে চাঁদে পৌঁছানোর মতো।’


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র, এ কথা সত্য। তবে দেশটিকে অবশ্যই বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত বলে মনে করেন অনেকে।

 

 

এনএমএম/

 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ