
প্রকাশিত: মে ২০, ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম
গাজা উপত্যকায় নতুন সামরিক অভিযান ও মানবিক সহায়তা বন্ধের জেরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি।
বিবৃতিতে তিন নেতা বলেন, ‘আমরা ইসরাইলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের বিরোধিতা করছি ও এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা সহ্যসীমার বাইরে চলে গেছে’।
পাশাপাশি তারা পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিন নেতা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি ইসরাইল মানবিক সহায়তা অবরোধ তুলে না নেয়, তাহলে তাদের ওপর টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
এ নিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জুমলট আল জাজিরাকে বলেন, ‘এই তিন দেশের করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে ইসরাইলের ওপর পুরোপুরি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা’।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য কিছু অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করলেও তা যথেষ্ট নয়। একে সম্পূর্ণ ও ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা হতে হবে। তারা অবশ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সাহায্য করতে হবে’।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদনকারী ফ্রানচেস্কা আলবানিজ বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা কীভাবে ‘টার্গেটেড’ হবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ইসরাইলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে’।
নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার দেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা তিন দেশের অবস্থানকে ‘হামাসকে পুরস্কৃত করার চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।
একই সঙ্গে তিনি গাজার ওপর ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ’ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন, যার মাধ্যমে পুরো গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।
ইউরোপের প্রতিক্রিয়া
এদিকে পশ্চিমা তিন নেতা বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর প্রায় তিন মাস পর মাত্র কিছু ট্রাক ঢোকানোর সিদ্ধান্তকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তারা সতর্ক করে বলেছেন, এর মাধ্যমে ইসরাইল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।
এ নিয়ে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ইসরাইলের অবরোধ আংশিকভাবে তুলে নেওয়া সম্পূর্ণরূপে অপ্রতুল’।
তিনি ফরাসি রেডিওতে বলেন, ‘ইসরাইলি হামলা ও অবরোধের ফলে গাজা একটি মৃত্যুকূপ হয়ে গেছে। সেখানে ইসরাইলের অন্ধ সহিংসতা ও মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া জনগণকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে’।
এদিকে সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। নেদারল্যান্ডসে আল জাজিরার প্রতিনিধি স্টেপ ভাসেন বলেন, ‘গাজায় দেড় বছরের বোমাবর্ষণ ও খাদ্য অবরোধের পর ইউরোপে জনমত বদলাতে শুরু করেছে। ইইউ এখন ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে’।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘৮০ দিন টিভিতে সম্প্রচারিত অনাহার আর নির্মমতার পরও চাপ সৃষ্টি করতে এতো দেরি হওয়া নৈতিকভাবে নিন্দনীয়’।
এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলা ও অবরোধের বিরুদ্ধে গোটা ইউরোপ-আমেরিকা যখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে, ঠিক তখন সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে ইসরাইলের সামরিক হামলায় আরও ৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে অন্তত তিন শিশুও রয়েছে, যারা খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অন্তত ১২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার চিকিৎসা সূত্র।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার অভিযোগ এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও উচ্চস্বরে আলোচিত হচ্ছে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও জাতিসংঘের অভ্যন্তরেও নীতিগত অবস্থানে স্পষ্ট পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই হুমকিগুলো বাস্তবায়ন হবে কিনা, নাকি এগুলোও অতীতের মতো নিঃসার হয়ে যাবে। সূত্র: আল-জাজিরা