• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২
৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েন

নেপালের পর ফ্রান্সে সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১২:১০ এএম

নেপালের পর  ফ্রান্সে  সরকারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নেপালের পর এবার ফ্রান্সে চলছে সরকারবিরোধী আন্দোলন। বুধবার বিক্ষোভকারীরা রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে। তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আগুন ধরিয়ে দেয় । পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমনে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভ দমনে ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

বুধবার বিক্ষোভ শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ অন্তত ২০০ জনকে আটক করে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম লো মঁদ। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, এ সংখ্যা অন্তত ৩০০ জন।

ফ্রান্সে ‘ব্লোকঁ তু’ (সবকিছু বন্ধ) আন্দোলনের দিনে  প্যারিসসহ বিভিন্ন শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ, ব্যারিকেড তৈরি এবং আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটায়। এসময় পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপে বিক্ষোভকারী তরুণদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়াঁ লেকর্নু দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই পুরো দেশ উত্তাল হয়। এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেললাইনে বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

বিক্ষোভকারীরা মূলত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর বাজেটে ব্যয় সংকোচন নীতি এবং সামাজিক সেবার বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো বলেন, ‘এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট — ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি করা।’

নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়াঁ লেকর্নু দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভের মুখোমুখি হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে ৮০,০০০ পুলিশ ও নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

আগুন ধরানোর জন্য সড়কে ডাস্টবিন জড়ো করছেন কয়েক বিক্ষোভকারী। বুধবার প্যারিসে। ছবি: এএফপি
আগুন ধরানোর জন্য সড়কে ডাস্টবিন জড়ো করছেন কয়েক বিক্ষোভকারী। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্দোলন মূলত তরুণ সমাজের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসন্তুষ্টির প্রকাশ। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন, যাত্রী চলাচল ও সরকারি সেবা প্রভাবিত হচ্ছে।

আন্দোলনের কারণে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল হওয়ায় সাধারণ মানুষকে জরুরি ক্ষেত্রে ছাড়া রাস্তায় না বের হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। 

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, মাখোঁর উচিত ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া। অথবা একজন বামপন্থী নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা। কিন্তু তিনি তাঁরই এক ঘনিষ্ঠজনকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। এটি হতাশাজনক।দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো বলেছেন, সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে এমন বিক্ষোভ করা হচ্ছে। বুধবার বিক্ষোভ শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রেনে-তে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি রেললাইনে বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্রুনোর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।

পুলিশ নিক্ষেপ করে ধোঁয়ার গ্রেনেড। পরে সেটি সংগ্রহ করে পুলিশের দিকে ছোড়েন এক বিক্ষোভকারী। ছবি: এএফপি
পুলিশ নিক্ষেপ করে ধোঁয়ার গ্রেনেড

লো মঁদ মিডিয়া বলছে, কোনো সুনির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছাড়াই এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা মাখোঁ প্রশাসনের বাজেটে ব্যয় সংকোচনের বিরোধীতা করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতের বৈষম্যেরও বিরোধীতা করছেন।

দক্ষিণ ফ্রান্সে বিক্ষোভকারীদের প্রতিহতের চেষ্টায় পুলিশ। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ ফ্রান্সে বিক্ষোভকারীদের প্রতিহতের চেষ্টায় পুলিশ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেতাইয়ো বলেন, মূলত অনলাইনে সরকারবিরোধীরা সংঘবদ্ধ হন। কিছু বামপন্থী রাজনীতিবিদ তাদের সমর্থন দিচ্ছেন। তারা ফ্রান্সে একটি বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। বুধবার কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর মানসিকতা নিয়েই রাস্তায় নেমেছে।
 

আর্কাইভ