প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২১, ০৯:৩০ পিএম
ই-কমার্স প্রতারণার লক্ষ্যেই হুমায়ুন কবির নিরব রেডিও জকির চাকরি ছেড়েছিলেন।
এরপর যোগ দেন কিউকমে। সংস্থাটির সিইও রিপন মিয়াকে গ্রাহকের অর্থকড়ি হাতানোর অভিনব
নানা কৌশলও রপ্ত করান তিনি। এক দিনের রিমান্ডে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে আরজে নিরব এ
তথ্যসহ আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছেন
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
রিমান্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রেডিও জকির চাকরি
ছেড়ে দিয়ে ই-কমার্স প্রতারণায় নেমেছিলেন নিরব। তিনি হেড অব সেলস (কমিউনিকেশন
অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) অফিসার হিসেবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমে চাকরি শুরু
করেন। এর আগে গত ১৫ বছর আরজে হিসেবে রেডিও টুডে, এবিসি রেডিও, রেডিও ধ্বনি, সিটি এফএমে কাজ
করেছেন তিনি। কিন্তু কয়েক মাস আগে আরজে পেশা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর কিউকমে যোগদানের পরই মেতে ওঠেন কোটি টাকা হাতানোর প্রতারণায়। তিনি
সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল মাধ্যমে কিউকম সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে
আকৃষ্ট করতেন। আর তার কথায় বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পথে
বসেছেন। আরজে নিরবকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেক
প্রশ্নই এড়িয়ে যান তিনি। তবে তার পরামর্শে কিউকমের সিইও মো. রিপন মিয়া প্রতারণা
করে গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হয়েছেন।
আরজে নিরব নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিউকম নিয়ে নানান প্রচারণা চালাতেন। গত ২৪
আগস্ট কিউকম নিয়ে একটি নিউজ শেয়ার দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘পুরো দেশ আর সারা দুনিয়া জুড়ে কিউকম ছড়াতে চাই, ইনশাআল্লাহ। আট বিভাগে নিজস্ব ডেলিভারি পয়েন্ট, ওয়ারহাউজ, কাস্টমার কেয়ার
চালু করবে কিউকম’। এ ছাড়াও নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এমন অনেক স্ট্যাটাস আর নিউজ
শেয়ারের মাধ্যমে কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন আরজে নিরব। এমনকি কিউকমের
প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসার পরও গত ২২ সেপ্টেম্বর নিরব তার ফেসবুকে লেখেন, মনে হয় এই শিল্পটা বন্ধ না করে কেউ থামবে না।
একজন সৎ কর্মচারী হিসেবে বিপদের দিনে মালিকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলাম, যেন গ্রাহক তার টাকাটা ফেরত পায়। সঠিকভাবে
গুছিয়ে কাজ করতে পারলে হয়তো তা সম্ভবও। কিন্তু মনে হচ্ছে, আপনারা পণ করে বসেছেন চাকরিটা না ছাড়া পর্যন্ত
আমার পিছু ছাড়বেন না! তবে তাই হোক।
এসব স্ট্যাটাসের বিষয়েও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আরজে নিরবকে। উত্তরে
তিনি জানিয়েছেন, কোম্পানির ক্রান্তিলগ্নে
গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে এটি ছিল তার অন্যতম কৌশল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
কর্মকর্তারা বলছেন, আরজে নিরবের প্রচারণায়
আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহকেরা কিউকমের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। তাই কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না
নিরব।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরজে নিরবের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য
যাচাই-বাছাই চলছে। পাশাপাশি মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, পল্টন থানায় প্রতারণা ও
আত্মসাতের একটি মামলায় গত রোববার ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয় কিউকমের সিইও রিপন
মিয়াকে। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার এক
ভুক্তভোগী বাদী হয়ে আরজে নিরবসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায়
একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শুক্রবার ভোরে আদাবরের নবোদয় হাউজিংয়ের বাসা
থেকে গ্রেফতার করা হয় হুমায়ূন কবির নিরব ওরফে আরজে নিরবকে। তাকে এক দিনের রিমান্ডে
নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
শামীম/এম. জামান