• ঢাকা শুক্রবার
    ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের নতুন অধ্যায় শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইউক্রেনে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। আকাশ প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে সাঁজোয়া যান– অনেক কিছুই পাঠানো হয়েছে। তবে ভারী আক্রমণাত্মক অস্ত্র এতদিন পাঠায়নি তারা। সে দোহাই সামনে আর খাটবে না। বুধবার জার্মানির ভারী ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবসান হতে চলেছে সে অধ্যায়ের।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের পাঠানো ভারী ট্যাংক সরাসরি রুশ সেনাদের ওপর আঘাত হানতে ব্যবহার করা হবে। ফলে বলা চলে, অনেক দিক থেকেই ঘুরে গেছে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। নতুন পদক্ষেপের মধ্যে ন্যাটোর অকুতোভয় একটি ছবিও ফুটে উঠেছে বিশ্ববাসীর সামনে। 
কিয়েভকে ট্যাংক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় এরই মধ্যে পশ্চিমা নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। পশ্চিমাদের এই ট্যাংক দ্রুত সরবরাহ করা দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ইউক্রেনে জার্মানি ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্র ৩১টি আব্রামস ট্যাংক পাঠাবে বলে জানা গেছে। 
আগামীতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে যুদ্ধবিমান চাওয়ার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন সরকার। মিত্রদের কাছে চতুর্থ প্রজন্মের মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও চাইবে তারা। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভের উপদেষ্টা ইউরি সাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের বড় একটি যুদ্ধ। আর স্পষ্ট করে বললে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে বড় স্থলভাগের যুদ্ধ। ন্যাটো শুরু থেকেই এ যুদ্ধ নিয়ে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছে, বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকেও পিছিয়েছে।
তবে ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দৃঢ় রুশবিরোধী অবস্থান ধরে রাখতে দেখা গেছে। আর সে অবস্থান তারা ধরে রেখেছে মূলত অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। যেমন- সোভিয়েতের মুষ্টিতে থাকলে কেমন অনুভূতি হয়, তা পোল্যান্ড জানে। দেশটির অনেক নাগরিকেরও মনে আছে রুশ সাম্রাজ্যবাদিতার সে সংস্করণ কেমন হতে পারে। ফলে দেশটিকে দেখা গেছে ইউক্রেনের পক্ষেই সরব হতে।
অতীত অভিজ্ঞতা ভূমিকা রেখেছে অন্য ক্ষেত্রেও। যেমন- জার্মানি শেষবার নিজেদের ট্যাংক এভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছিল নাৎসি বাহিনীর অধীনে থাকার সময়। ফলে এবার তাদের ট্যাংক পাঠানো নিয়ে ইতস্তত করাটা অনেকটাই অনুমেয় ছিল।
শুরু থেকেই জার্মানিকে এ বিষয়টি নিয়ে চাপের মুখে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানিও পাল্টা প্রস্তাব ছুড়েছিল- তোমরা নিজেদের আব্রামস ট্যাংক পাঠাও, আমরাও লেপার্ড ট্যাংক পাঠাব। 
শুরুতে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত সে প্রস্তাবে সায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে জার্মানির এ বিষয় নিয়ে আপত্তি করার আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের এ সায় ট্যাংক পাঠানোর গোটা পরিকল্পনাকেই ন্যাটোর ছায়াতলে নিয়ে এসেছে। 
ইউক্রেনে আব্রামস ট্যাংক পাঠানোর বিষয়টি একদম সাদামাটা নয়। এর পেছনে প্রচুর খরচ হবে এবং এটি ঠিকঠাক রাখাও ব্যাপক ঝামেলার কাজ। পাশাপাশি এটি ডিজেল ইঞ্জিনে চলে না। এর ইঞ্জিন ঠিক রাখার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি এটি ইউক্রেনের মাটির জন্যও খুব বেশি উপযুক্ত নয়। কিন্তু তারপরও এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সায় দেয়ার বিষয়টি মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে তারা যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সেটিকে তুলে ধরছে। ইউক্রেনে পশ্চিমের পাঠানো সর্বশেষ সহায়তা মূলত দুটি বিষয় বলছে। প্রথমটি হলো- রাশিয়ার ‘লাল রেখা’ পার হওয়া নিয়ে রাষ্ট্রগুলো ভীত নয়। দ্বিতীয়ত, আসন্ন ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণের মুখে পড়তে হতে পারে, তা নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন নয় ন্যাটো সদস্যরা। 
একদিক থেকে দেখলে, ক্রমাগত পশ্চিমা সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন। আর এটি অবশ্যই ক্রেমলিনের জন্য একটি সমস্যা।


ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক মতামতে সংবাদমাধ্যমটির সহযোগী সম্পাদক ও কলামিস্ট মার্টিন কেটেল লিখেছেন, ইউক্রেনে আরও পশ্চিমা ট্যাংক পাঠানোর অর্থ এটি নয় যে, যুদ্ধ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। যুদ্ধ আরও কয়েক বছর না চললেও, মাসের পর মাস চলবে।

 

 

এনএমএম/এএল

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ